বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে অর্থমন্ত্রীর সমর্থন

দেশের বিমা খাতে শৃঙ্খলা আনতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) জারিকৃত বিভিন্ন নির্দেশনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরই অংশ হিসেবে বিমা কোম্পানির পরিচালকেরা একই সঙ্গে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সম্প্রতি আইডিআরএ এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
তবে বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালকেরা বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে পারেন। তবে সেটিও যাতে থাকতে না পারেন, সে জন্য ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) আয়োজিত ‘বিমা আইন, ২০১০ ও এর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন। প্রধান আলোচক ছিলেন আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ।
বিআইএর চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এ কে আজিজুল হক চৌধুরী। বিআইএর ভাইস চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান সেমিনারে ধন্যবাদ বক্তব্য দেন।
তবে সেমিনার চলাকালে একাধিক বিমা কোম্পানির পরিচালক নির্ধারিত বক্তাদের বক্তব্যের সময় দাঁড়িয়ে কথা বলতে চাইলে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিরক্ত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মূল প্রবন্ধে বিমা শিল্পের উন্নয়নে বিমা আইন ২০১০-এর বিভিন্ন ধারা সংশোধনের কথা বলা হয়। আইনটিতে পরিশোধিত মূলধন, সলভেন্সি মার্জিন, নিবন্ধন, বিমার পাশাপাশি পরিচালকদের অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও পরিচালক হিসেবে থাকা, এজেন্সি কমিশন, সাধারণ বনাম ইসলামি বিমা, প্রিমিয়াম পরিশোধ, দাবি নিষ্পত্তি ইত্যাদি বিষয়ে শৈথিল্য আনার কথা বলা হয়।
এসব প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সলভেন্সি মার্জিন, প্রিমিয়াম পরিশোধ, দাবি নিষ্পত্তি এবং হিসাবরক্ষণ-সম্পর্কিত বিধি তৈরির ব্যাপারে বিমাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার দরকার রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলোচনা করা ভালো, তবে সবক্ষেত্রে নয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি বিষয়ে আমার বলার আছে। এতে ছাড় পাওয়ার সুযোগ খুব কম। একটি হচ্ছে, বিমা কোম্পানির পরিচালকেরা অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। এদিকে ব্যাংক আইনও সংশোধন করা হচ্ছে, যাতে ব্যাংকের পরিচালকেরা বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকতে না পারেন।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আরও বলেন, ‘সম্পদের পুঞ্জীভূত হওয়াটা একটা বড় সমস্যা। সরকারের অভিমত হলো, এটা হতে দেওয়া যাবে না। সুতরাং এ ব্যাপারে বিমা কোম্পানির লোকদের চেষ্টা করেও কোনো লাভ হবে না।’
অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিষয়টি (আইন সংশোধন) আট মাস ধরে স্থগিত করে রাখলেও দৃঢ়তার সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আসবেই।’
দেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে যতটা উন্নয়ন হয়েছে, ইসলামি বিমার ততটা হয়নি বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
জনাব মুহিত বলেন, পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও দেশে দুজন অ্যাকচুয়ারি ছিলেন। এত বছর পরও দুজনই। এ থেকেই বোঝা যায়, বিমা খাত কতটা অবহেলিত।
এ জন্য প্রশিক্ষণের অভাবকে দায়ী করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য পুরোনো একটা একাডেমি আছে। বাংলাদেশ বিমা একাডেমি। কিন্তু এরা একেবারেই অপদার্থ। কিছুই করে না।’
আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বলেন, বিমা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। খাতটিকে সুশৃঙ্খল করতে আইডিআরএ বদ্ধপরিকর। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকায় এ খাতে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে তিনি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চান।
আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বক্তব্যের মাঝখানে দর্শক-শ্রোতা সারি থেকে উঠে হঠাৎ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেন কিছু বলার চেষ্টা করলে অর্থমন্ত্রী তাঁকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন।
সেমিনারে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ অভিযোগ করে বলেন, দেশে বেসরকারি খাতের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। ব্যাংকের সুদের হার বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার মতো। আর এই অবস্থায় নতুন সমস্যা তৈরি করছে আইডিআরএ।
আইডিআরএর সব প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কমিটি করা হোক এবং সেই কমিটি এমন একটা নীতিমালা প্রণয়ন করুক, যাতে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।’
সোহরাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, পলিসিহোল্ডারের স্বার্থে সলভেন্সি মার্জিন একটি ভালো হাতিয়ার। ব্যবসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ বাড়বে। এর দরকার রয়েছে বলেই ১৯৯৯ সালে ভারত তা তুলে দিয়ে ২০০৮-এ আবার চালু করেছে।
পাকিস্তানও ২০০০ সালে তুলে দিয়ে ২০০৬ সালে পুনরায় চালু করেছে।
নাসির এ চৌধুরী বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কোনো ফাইল গেলে সহজে বের হয় না।
এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বিমা আইনে ক্ষুদ্র বিমা ব্যবসা সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
সেমিনার শেষে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ কবির হোসেন বলেন, তাঁরা অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএম) ডেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
আইডিআরএর সব নির্দেশনা বা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করার বিষয়টি ইজিএমে উত্থাপিত হবে, সেমিনার শেষে বিমা কোম্পানির একাধিক পরিচালকের কথা থেকে তা জানা যায়।

No comments

Powered by Blogger.