শেয়ারবাজার-বিনিয়োগকারীদের আকুতি শুনুন

বিশ্বখ্যাত সাময়িকী 'টাইম' বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বের নিকৃষ্টগুলোর একটি বলে অভিহিত করেছে। যে বাজারে মূল্য সূচক এক বছরে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে পড়ে যায় তার সম্পর্কে এমন মন্তব্যে দোষ দেওয়া চলে না। বিষয়টিকে 'গণমাধ্যম সব নষ্টের গোড়া' বলে উড়িয়ে দেওয়ারও উপায় নেই।
গত সোমবার সূচক ২২৯ পয়েন্ট কমে যায়, যা ২০১০ সালের ডিসেম্বরে দরপতন শুরুর পর সর্বনিম্ন। এই একই দিনে জাতীয় সংসদে মহাজোটের কয়েকজন সিনিয়র সদস্য শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রাখার পরের দিনই সূচক ৩২৯ পয়েন্ট বেড়ে যাওয়া মোটেই স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। অতীতেও এমনটি দেখা গেছে। সংসদে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান এবং আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রচুর মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে অনেক মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এ বাজারে টেনে আনায় সরকারের ভূমিকা ছিল। একই সময়ে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাজার হাজার লোক টাকা নিয়ে এ বাজারে আসে। কিন্তু সরকার তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় ব্যাংকগুলো অঢেল অর্থ কামিয়েছে। কিছু ব্যক্তি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আর লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পথে বসেছে। সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীর এ পর্যবেক্ষণ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করে আরও বক্তব্য রেখেছেন রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ফজলুল আজিম প্রমুখ সংসদ সদস্য। তারা যখন ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করে বক্তব্য রাখছিলেন তখন সরকারি জোটের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান। তারা প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের যন্ত্রণা-বেদনার কথাই তুলে ধরেছেন। সরকার, বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী এর প্রতি যথাযথ মনোযোগ প্রদান না করলে শুধু যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে তা নয়, তোফায়েল আহমেদ যথার্থ সতর্কবার্তাই দিয়েছেন_ 'জনগণের একটি দিন আছে। ভোটের দিন জনগণ বিচার করে দেবে।' আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সবাই এ বার্তা উপলব্ধি করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সবার জানা আছে যে, গত নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে 'ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যা যা করা দরকার সবকিছু করা হবে' বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় বাজারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু ফের কেন অস্থিরতা, কেনইবা আস্থা ফিরে আসছে না সেটা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা চাই। সংসদে জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করেছেন, 'পুঁজিবাজার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নানা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করতে হবে।' সোমবার সংসদে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। দেশবাসী কী চায় সেটা তাদের অজানা নয়। এটা ঠিক যে, সরকারি ঘোষণা দিয়ে কিংবা কৃত্রিম অন্য কোনো উপায়ে শেয়ারবাজার চাঙ্গা বা স্থিতিশীল করা যায় না। এর মূল শর্ত হচ্ছে অর্থনীতির হালচাল সঠিকপথে রাখা এবং এসইসিসহ নিয়ন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যথাযথ দায়িত্ব পালন। কিন্তু এটাও মনে রাখা চাই, বাজারে সর্বদাই ম্যানিপুলেটররা হুল ফোটানোর চেষ্টায় থাকে, তাদের দমিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের এবং বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এটা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।

No comments

Powered by Blogger.