সাক্ষাৎকার রাশেদ খান মেনন এমপি-ওয়ান-ইলেভেনের পুনরাবৃত্তি জনগণ চায় না-সাক্ষাৎকার গ্রহণ :সুভাষ সাহা ও মাহফুজুর রহমান মানিক

বামপন্থি রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। ছাত্ররাজনীতি দিয়েই তার রাজনৈতিক অঙ্গনে পদচারণা শুরু। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।


ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক আইনবিরোধী ও বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি জাতীয় রাজনীতির সামনের সারিতে চলে আসেন এবং প্রায় পাঁচ দশক এ অবস্থান ধরে রেখেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান আমলে 'স্বাধীন পূর্ব বাংলা'র কথা বলার জন্য তাকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত তার চারটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনীতি ও অর্থনীতির বিভিন্ন ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেছেন


সমকাল : নির্বাচন কমিশন দিয়েই শুরু করছি। কমিশন পুনর্গঠনে সার্চ কমিটি হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিরোধিতা করছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রাশেদ খান মেনন : নির্বাচন কমিশন গঠন সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এবারই প্রথম সবার মতামত নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্র্রপতি। নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ কাজ করার প্রস্তাব করেছিল। আমরা মনে করি, সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে একধাপ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এক্ষেত্রে। ৪০ বছরে কোনো নির্বাচন কমিশন গঠনে বিরোধী দলের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত কমিশন স্বাভাবিকভাবেই সবার গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। বিএনপি যে প্রশ্ন তুলছে তা অবান্তর। কারণ নির্বাচন কমিশন গঠনের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সংযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন_ এটি হচ্ছে আমাদের সংবিধানের মৌল বিষয়ের একটি। সুতরাং সেই মৌল দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি কোনো ভুল করেছেন বলে আমি মনে করি না। আরও ভালো হতো যদি আইনটা প্রণয়ন করে যেতে পারতাম আমরা। তাহলে বিষয়টি স্থায়ী রূপ পেত। তবে এখন যে সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে, আমরা আশা করব, সেই সার্চ কমিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পেঁৗছাতে সক্ষম হবে। বিরোধী দল এখানে কেবল বিরোধিতার স্বার্থেই কথা বলেছে। আজ যদি বলা হয়, তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তাহলে দেখা যাবে, সেটিরও তারা বিরোধিতা করছে।
সমকাল : নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আপনাদের আর কোনো প্রস্তাব...।
মেনন : নির্বাচন কমিশনের আর্থিক দায়িত্ব সরকার থেকে পৃথক হওয়া দরকার। কমিশনে নিজস্ব লোকবল নিয়োগের ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা পর্যায়ে যদি তারা তাদের নিজস্ব জনবল নির্ধারণ করতে পারে তাহলে প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত থেকেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হবে। দেখা যায়, লোকবলের জন্য তাদের প্রশাসনের ওপর নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, প্রশাসন তাদের কথা শোনে না। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সমকাল : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট 'আরও দুই মেয়াদ পর্যন্ত রাখা যেতে পারে'_ এ রকম একটা পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার তা গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে আপনাদের দলগত অবস্থান?
মেনন : এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই মেয়াদের জন্য রেখে দেওয়ার পক্ষে। তারপরও সমস্যা থেকে যেত। কারণ আদালতের শর্ত ছিল_ বিচার বিভাগকে এর মধ্যে ইনভলভ করা যাবে না। সরকার যদি এটি মেনেও নিত, তখনও সংকট থাকত এ জন্য যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হতেন_ এ নিয়ে বিরোধী দল আপত্তি উত্থাপন করত। সুতরাং হাইকোর্টের রায় মেনে নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই বিরোধী দল মেনে নিত_ এটি মনে করার কারণ নেই। তারপরও আমি বলব, সরকারের উচিত ছিল বিষয়টি বিবেচনা করা।
সমকাল : বিচার বিভাগের ওপর সরকার প্রভাব খাটাচ্ছে বলে কথা উঠছে...।
মেনন : আমরা একটা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ চাই এবং এটি দুর্ভাগ্য যে, বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে দলীয় প্রভাবের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের এই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রয়েছে সেহেতু আমি মনে করি, বিচার বিভাগ প্রভাবমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত। এখন যদি সুপ্রিম কোর্টে দলীয় লোক দিয়ে থাকে তাহলে কেবল বলতে হবে_ গোড়ায় গলদ...।
সমকাল : সরকারের ব্যর্থতার দায় মহাজোটের শরিক দল হিসেবে আপনাদের ওপরও বর্তায়...।
মেনন : আমরা তো অনেক ইস্যুতে তীব্র বিরোধিতা করেছি। ২০১০ সালে আমাদের পার্টি কংগ্রেসে আমরা আইন-শৃঙ্খলা, বিদ্যুৎ, দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ভুল পদক্ষেপের সমালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট না করার জন্য আমি সংসদে বলি এবং বিকল্প প্রস্তাব দিই। মূল্যবৃদ্ধি রোধের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং টিসিবি কার্যকর করার কথা বলি। দুর্ভাগ্যজনক যে, টিসিবি তিন বছরেও সেভাবে কার্যকর করা যায়নি আর রেশনিং ব্যবস্থার বিষয়েও সরকার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে মূল্যবৃদ্ধি সরকার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হচ্ছে না। এর বাইরেও অন্য যে প্রশ্নগুলো বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ প্রশ্নে বলেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে বলেন_ পার্লামেন্ট এবং এর বাইরে অনেক কথা বলেছি।
সমকাল : মহাজোটের শরিক দল হিসেবে সরকারে তো আপনাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নেই...।
মেনন : আপনি ঠিকই বলেছেন। জোটের রাজনীতি করলে সর্বক্ষেত্রে জোটবদ্ধতা থাকা দরকার। কিন্তু সরকারের কোথাও এ অংশগ্রহণ নেই।
সমকাল : এ ব্যাপারে আপনাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কি ক্ষোভ আছে?
মেনন : ক্ষোভের প্রশ্ন নয়, এটি ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কেবল আমাদের কর্মীদের মধ্যেই নয়, জনগণের মধ্যেও তা রয়েছে।
সমকাল : গণতান্ত্রিক সরকারে মাঝে মধ্যেই রদবদল হয়ে থাকে। কোনো মন্ত্রী বা কেউ যদি ঠিকমতো পারফর্ম না করেন তাহলে তাকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু এ সরকারের ক্ষেত্রে তো তেমন কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন দেখিনি।
মেনন : দেখুন, এটি প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব্ব ব্যাপার। আমি মনে করি, মন্ত্রিসভার পারফরম্যান্স বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত বলছেন, তিনি খুবই স্যাটিসফাইড। জনগণের পারসেপশন ভিন্ন। এটি হচ্ছে, একেকজনের একেক রকম উপলব্ধির ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, অবশ্যই এক্ষেত্রে যে মন্ত্রণালয়গুলো পারফর্ম করছে না বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে অথবা প্রতীয়মান হচ্ছে কিংবা অধঃগতির কথা বলা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে কালেকটিভ মেজার নেওয়া অনেক আগেই উচিত ছিল। এখনও নেওয়া যায়। এর মধ্যে লজ্জার কিছু নেই, জয়-পরাজয়ের কিছু নেই।
সমকাল : মহাজোট কি শুধু নির্বাচনী জোট? আপনারা আবার ১৪ দলও পুনরুজ্জীবিত করছেন...।
মেনন : পুনরুজ্জীবিত করার ব্যাপার নয়, আমরা তো ১৪ দলেই আছি। মহাজোট ছিল নির্বাচনী বিষয় আর ১৪ দল ২৩ দফা কর্মসূচিভিত্তিক জোট। ১৪ দলের ঐক্যের বিষয়টি রাজনৈতিক আর মহাজোটের ঐক্যের বিষয়টি নির্বাচনকেন্দ্রিক।
সমকাল : সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ইসলামকে একটি গোঁজামিল দেওয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন...।
মেনন : অনেকে কেন, আমরা তো শুরু থেকেই বিরোধিতা করেছি।
সমকাল : কিন্তু আপনারা সংসদে ওয়াকআউট বা এ ধরনের কিছু করেননি, এমনকি সইও করেছেন সংশোধনীতে।
মেনন : আপনাদের পারসেপশন ভুল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা ধর্মনিরপেক্ষতা পুনরুজ্জীবিত করার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বিসমিল্লাহও এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, পার্লামেন্টে বিশেষ কমিটিতে এ ব্যাপারে নতুন ডিসিশন নিয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, আমরা যখন পার্লামেন্টে এ বিষয়ে পর্যালোচনা করি তখন আমাদের তরফ থেকে আপত্তি উপস্থ্থাপন করেছি। আমরা ভোটে হেরে গেছি। এখানে ক্লজ ওয়াইজ ভোট হয়নি। ক্লজ ওয়াইজ ভোট হলে আমরা বলতে পারতাম, এটির পক্ষে এবং এটির পক্ষে নই। অন্য ক্লজগুলো আমি মনে করি ঠিকই আছে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে এর বিরোধিতায় যাওয়ার কোনো অবকাশ ছিল না। সেক্ষেত্রে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলি, এই প্রথম সংসদের ইতিহাসে একটি বিভক্তি ভোটে আমরা নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে তারপর ভোট দিয়েছি এবং তা সংসদের কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করা আছে।
সমকাল : এবার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে যাই। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে প্রথম দিকে মানুষের ইতিবাচক মনোভাব ছিল। কিন্তু তিস্তা, টিপাইমুখ, তারপর মাঝে মধ্যে সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা_ এসব কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে এবং অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সরকার এ ব্যাপারে ভারসাম্য রাখতে পারছে না...।
মেনন : আমি মনে করি, তিস্তা প্রশ্নে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। কিন্তু টিপাইমুখ প্রশ্নে নয়। টিপাইমুখের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান বাংলাদেশের জনস্ব্বার্থের বিরুদ্ধে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে মানুষের কাছে। অন্যদিকে সীমান্তে যে জুলুম-অত্যাচার হচ্ছে_ এটিও আমাদের দু'দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসেবে রয়েছে। তাছাড়া ভারত আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় যে চুক্তিগুলো হয়েছিল এর বাস্তবায়নও হয়নি। ফলে এক ধরনের আস্থ্থার সংকট তৈরি হয়েছে, এমনকি সরকারের মধ্যেও এ মনোভাব তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়। আস্থ্থার এই সংকট নিরসন জরুরি এবং আমাদের উদ্যোগী হয়ে কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিস্তা প্রশ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, অতি অল্প সময়ে এর সমাধান করবেন। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে এর সমাধান হবে। আজ পর্যন্ত এর সমাধান হয়নি। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক উদ্যোগ যদি পরিলক্ষিত না হয় তাহলে জনগণের ভ্রান্ত ধারণা হতেই পারে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যৌথ সমীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। বিষয়টি এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়_ বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র্র উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন তা একপেশে। আমি জানি না, এগুলো তাদের ব্যক্তিগত অভিমত কি-না। সীমান্ত সংঘর্ষের প্রশ্নেও একই কথা। আমাদের উচিত হবে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করা। ভারতকে এ কথা বলা যে, দু'দেশের সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব আমাদের চেয়েও ভারতের বেশি।
সমকাল : আপনি কি এক্ষেত্রে প্রো-অ্যাকটিভ কূটনীতির কথা বলছেন?
মেনন : এটিই আমি বলছি।
সমকাল : অর্থমন্ত্রী বলছেন, অর্থনীতির অবস্থ্থা খুবই খারাপ।
মেনন : অর্থমন্ত্রী কেন, এটি তো সব মন্ত্রীই বলছেন। বরং তিনি তো বলেছেন_ ভালো।
সমকাল : না, তিনি একদিন...।
মেনন : তিনি একবার বলেছেন খারাপ আবার বলছেন, সাংবাদিকরা দায়ী। আমি মনে করি, অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। অর্থনীতিতে জরুরি কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে যেভাবে সংকোচন নীতি নেওয়া হলো তা কতটা কার্যকর হবে_ জানি না। আইএমএফের ঋণ যে শর্তে নেওয়া হলো তাও গ্রহণ করা আমার বিবেচনায় ঠিক হয়নি।
সমকাল : পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা রয়েছে...।
মেনন : পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ঘটনা থাকলে তদন্ত করে বের করা উচিত। কিন্তু এ সূত্র ধরে বিশ্বব্যাংক অর্থ বন্ধ করে দিল_ এটি আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। আমি মনে করি, রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে অন্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এখানে দুর্নীতি থেকে উদ্ধার করাই বড় বিষয় নয়, বরং বিশ্বব্যাংকের যে দুর্নীতি তাও অনেক বড়। এ দুর্নীতি কে ধরবে_ সেটিও দেখার বিষয়।
সমকাল : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে?
মেনন : হবে মানে? হতেই হবে।
সমকাল : এ ব্যাপারে মন্ত্রীদের বক্তব্য তো বিভ্রান্তিকর...।
মেনন : কোনো মন্ত্রী যদি বেশি কথা বলেন তাহলে কিছু করার নেই। তবে আমি মনে করি, বিচার নিয়ে জনমত সংগঠিত করা প্রয়োজন। বিচার ট্রাইব্যুনালই করবে। এ নিয়ে মন্ত্রীদের মন্তব্য করা উচিত হবে না।
সমকাল : প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচন করবে না। এক্ষেত্রে তারা যদি নির্বাচন না করে...!
মেনন : আমরা মনে করি, সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের যে প্রক্রিয়া নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছি তা বজায় রাখতেই সব রাজনৈতিক দলের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, বিরোধী দলও তাদের দায়িত্ব পালন করবে। তারা যদি সংবিধান এড়িয়ে গিয়ে অন্য কিছু করতে চায় তাহলে তা দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে, গণতন্ত্রেরও ক্ষতি হবে এবং তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সমকাল : দেশে ইতিমধ্যে একটি ক্যু চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখন বিরোধী দল বলছে, তারা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া সরকার উৎখাতের আর কোনো...।
মেনন : গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তারা সরকার উৎখাত করতে চায়। কিন্তু এখন যে পদ্ধতি আমরা অনুসরণ করছি তা হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সরকার পরিবর্তন হতে হবে।
সমকাল : বিরোধী দলকে সংসদে আনার ব্যাপারে সরকারকে কি আরও উদ্যোগী হওয়া উচিত নয়?
মেনন : আমি তো মনে করি, বিরোধী দল সংসদে না আসার সঙ্গত কারণ নেই। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, যেসব কারণে তারা সংসদ বর্জন করছে সেগুলো যুক্তি হতে পারে না। বরং সংসদে এসেই তারা এ কথাগুলো ভালোভাবে বলতে পারত। এতে সংসদও প্রাণবন্ত হতো এবং মানুষও বিষয়গুলো জানতে পারত। আমি মনে করি, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। বিরোধীদলীয় নেতারা বলেছিলেন, সংসদ কখনোই বর্জন করবেন না। এখন তারা সেটিই করছেন।
সমকাল : বলা হচ্ছে, দেশ ওয়ান-ইলেভেনের চেয়ে ভয়াবহ সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে।
মেনন : সন্দেহ নেই, সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে রাজনীতি। আমি বলব, ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের জন্য বিএনপি-জামায়াত মরিয়া। মরিয়া পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে যে কাজগুলো করছে, ১৮ ডিসেম্ব্বর যে কাজগুলো করল, ১৯ অক্টোবর যে কাজগুলো করেছে সেগুলো একেবারেই মরিয়া হয়ে করছে বলে মনে হচ্ছে এবং একটি সিচুয়েশন তৈরি করা, একটি ঘটনা তৈরি করা তাদের লক্ষ্য বলে আমার মনে হচ্ছে। এ সুযোগ নিয়ে যদি কেউ ওয়ান-ইলেভেন তৈরি করতে চায় তাহলে তা করতে পারে। তবে আমি মনে করি, তা হঠকারী পদক্ষেপ হবে। কারণ জনগণ যে এ রকম ওয়ান-ইলেভেন গ্রহণ করে না তা ২০০৮-এর নির্বাচনই প্রমাণ করেছে। সুতরাং আমি মনে করি, নির্বাচন এড়িয়ে গিয়ে এ ধরনের ওয়ান-ইলেভেন বলি বা অন্য কোনো ঘটনা বলি_ এটি হবে হঠকারী পদক্ষেপ।
সমকাল : আপনি তো শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি। মানুষ মনে করে, এ সরকার যে দুটি ক্ষেত্রে সফল_ শিক্ষা তার একটি। তারপরও শিক্ষার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি লক্ষণীয়_ সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষায় কিছু কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসে প্রশ্নপত্র সরবরাহ, বেশি টাকা নিয়ে ভর্তি করানো ইত্যাদি। এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন?
মেনন : দেখুন, শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের যে সাফল্য তার পাশাপাশি দু'একটা ত্রুটি থাকতেই পারে। সেগুলোও অতিক্রম করা দরকার। তবে স্কুুলগুলোর ক্ষেত্রে ভর্তি নিয়ে যে কথাগুলো বলছেন, এক্ষেত্রে বেশি প্র্যাকটিক্যাল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। সরকার অর্থকড়ি দিয়ে স্কুুলগুলো দাঁড় করাতে পারছে না। সেক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগ এবং বেসরকারি উদ্যোগ উৎসাহিত করা উচিত বলে আমি মনে করি।
সমকাল : আপনাদের বামপন্থিদের কোনো ধারা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কি?
মেনন : আমাদের দলের তরফ থেকে আমরা বামপন্থিদের ভিত জোরদার করার কথা বলেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে অন্য ধারা তৈরি খুব একটা বাস্তব বলে মনে হয় না।
সমকাল : আপনাকে ধন্যবাদ।
মেনন : ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.