আদর্শ দিয়েই মৌলবাদী রাজনীতি মোকাবিলা করতে হবে-গোপন স্থান থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড?

গণতান্ত্রিক দেশে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই প্রকাশ্য হওয়া উচিত। পক্ষ-বিপক্ষ সবার জন্যই এটা প্রযোজ্য। প্রকাশ্যে সভা-বৈঠক হবে এবং নির্বিঘ্নে মত প্রকাশ করা হবে, এটাই গণতান্ত্রিক রীতি। শনিবার প্রথম আলোয় ‘গোপন অবস্থান থেকে দলীয় কর্মকাণ্ড চালাবে জামায়াত’ শিরোনামে যে খবর ছাপা হয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন হতে হয়।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় নিবন্ধিত একটি দল। তার পরও কেন গোপন অবস্থান থেকে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে হবে? দলের

পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হতে পারে, প্রকাশ্য তৎপরতা চালালে নেতা-কর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় আছে। কিন্তু দলটি তো প্রকাশ্যেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড

চালিয়ে আসছে। সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, এমন অভিযোগ কেউ করেনি। এমনকি সরকার একাত্তরের

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতাকে আটক করার পরও জামায়াতে ইসলামী যথারীতি তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ করে তাদের কেন গোপন অবস্থানে যেতে হচ্ছে? সোমবার মহানগরে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল থেকে দলীয় কর্মীরা পুলিশের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ

করেছে, পুলিশের গাড়িসহ বেশ কিছু যানবাহন পুড়িয়ে দিয়েছে। এটি নিন্দনীয়। সেই ঘটনার পরই পুলিশ ব্যাপক ধরপাকড় করে এবং জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় ও ঢাকা

মহানগর শাখা অফিসে অভিযান চালায়। এর পর থেকেই দলটি গোপন অবস্থান থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে খবরে জানানো হয়। এটি যদি তাদের সাময়িক কৌশল

হয়, ভিন্ন কথা। স্থায়ীভাবে জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের গোপন তৎপরতা স্বভাবতই নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের জন্ম দেবে। বিষয়টি আরও

উদ্বেগজনক এ কারণে যে নিকট অতীতে এই দলটির অনেক নেতা-কর্মী প্রতিকূল পরিবেশে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এমনকি পঞ্চম

সংশোধনী মামলার রায় সত্ত্বেও সংবিধান সংশোধন করা হলো এমনভাবে, যাতে তাদের প্রকাশ্য রাজনীতি টিকে থাকে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশেই সেদিন মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে সরকারের দাবি। এটা সত্য হলে আইনি ব্যবস্থা তো আছেই এবং

আদালতেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে। কিন্তু জনমনে যদি ধারণা হয়, সরকার তাদের বিরুদ্ধে জোর খাটাচ্ছে, তাহলে তারা বরং জনগণের সহানুভূতি আদায়ের সুযোগ নিতে

পারে। মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পরাস্ত করতে হবে উন্নত রাজনৈতিক আদর্শ দিয়েই। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও ‘ধরে আনতে বললে

বেঁধে নেওয়ার নীতি’ পরিহার করতে হবে।
শেষ কথা হলো, জামায়াতের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দলের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম-এর সম্পাদক আবুল আসাদকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং রিমান্ডে নিয়েছে। যদিও

ইতিমধ্যে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সোমবারের ঘটনায় তিনিও পরামর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। এই অভিযোগের পক্ষে সরকারের কাছে কি

অকাট্য প্রমাণ আছে? যদি না থাকে, যে মতেরই অনুসারী হোক না কেন, একজন সম্পাদককে গ্রেপ্তার ও তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা কোনোভাবেই

কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.