ছাদে ঝুলছে ঘোড়া by রুডল্ফ এরিখ রাসপে

আকস্মিক গরম পড়ায় সব বরফ গলে যায়। সেই সঙ্গে আমিও বরফের নিচের মাটিতে পড়ে থাকি। আমি ঘোড়ায় চড়ে রাশিয়া যাচ্ছিলাম। সময়টা ছিল শীতকাল। প্রবল তুষার পড়ছিল। চলতে চলতে আমার ঘোড়াটি এত ক্লান্ত হয়ে গেল যে বেচারা হোঁচট খেতে লাগল। সেই সঙ্গে আমারও প্রচণ্ড ঘুম পেতে লাগল।


আমার এত ক্লান্তি লাগছিল যে ঘোড়ার পিঠ থেকে আমার পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল।
কোথাও থেমে বিশ্রাম নেওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু আমি বৃথাই রাত কাটানোর মতো আশ্রয় খুঁজছিলাম। পথে একটি বাড়িও আমার নজরে পড়েনি। কী আর করা, বাধ্য হয়ে খোলা ময়দানেই শুয়ে পড়তে হলো। কিন্তু কী মুশকিল! চারদিকে কোনো ঝোপঝাড়, গাছ কিছুই নেই। কেবল একটা ছোট্ট খুঁটি বরফের মাঝখানে বের হয়ে আছে। সেই খুঁটির সঙ্গেই আমার ঘোড়াকে কোনোমতে বেঁধে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙতেই কী অবাক কাণ্ড! মাঠ, বরফ সব উধাও। দেখতে পেলাম মাঠের পরিবর্তে আমি একটি গ্রামের রাস্তায় শুয়ে আছি। ঠিক গ্রাম নয়, শহরও বলা চলে।
চারদিকে শুধু বাড়ি আর বাড়ি। ব্যাপার কী? এ আমি কোথায় এলাম?
ঘরবাড়ি উদয় হলো কোত্থেকে? আর আমার ঘোড়াটাই বা গেল কোথায়?
অনেক মাথা ঘামিয়েও বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ শুনি, আমার ঘোড়ার সেই পরিচিত ডাক। কিন্তু কোথায় সে? শব্দটি আসছে যেন আকাশ থেকে। আমি ওপরে তাকালাম, কী দেখলাম, জানেন? দেখলাম, আমার ঘোড়াটি এক গির্জায় ঝুলছে। তাও আবার বাঁধা আছে একেবারে একটি ক্রুশের সঙ্গে।
এবার ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হলো। গতকাল তুষার পড়তে পড়তে শহরটি মানুষসহ বরফে চাপা পড়েছিল। গির্জা উঁচু ছিল বলে, এর ছাদের ক্রুশ বরফ থেকে বের হয়ে ছিল। আমি না বুঝে এই ক্রুশটাকে খুঁটি ভেবে এর সঙ্গে ঘোড়াটাকে বেঁধেছিলাম।
আর রাতে যখন আমি ঘুমাচ্ছিলাম, আকস্মিক গরম পড়ায় সব বরফ গলে যায়। সেই সঙ্গে আমিও বরফের নিচের মাটিতে পড়ে থাকি। কিন্তু আমার বেচারা ঘোড়াটি ওপরেই রয়ে যায়। কেননা সে তো ক্রুশের সঙ্গে বাঁধা ছিল।
কী করা যায়? মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলাম। টান মেরে আমার পিস্তলটা বের করে নিশানা ঠিক করি এবং দড়ির ঠিক মাঝখানে গুলি করে দড়ি দুই ভাগ। ঘোড়াটি উল্কাবেগে আমার কাছে নেমে এল। আমি লাফ দিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে পড়ে বাতাসের বেগে সামনে ছুটতে থাকি।
অনুবাদ: মৃধা সাবির শহীদুল্লাহ্

No comments

Powered by Blogger.