চূড়ান্ত করা নিয়ে আর সিদ্ধান্তহীনতা নয়-কয়লানীতি

কয়লা নিয়ে সরকারের অবস্থা যেন অনেকটাই দিশেহারা। বর্তমান সরকারের আড়াই বছর মেয়াদে কয়লানীতি চূড়ান্ত করার জন্য তাই দু-দুবার কমিটি গঠন করতে হলো। কয়লানীতি বাস্তবায়নে আবার একটি কমিটি গঠনের বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রই স্বীকার করেছে, সরকার আসলে বুঝতে পারছে না যে তারা কী করবে। এটাই যদি পরিস্থিতি হয়, তবে বিষয়টি খুবই হতাশার।


বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে কয়লার মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টন। আমাদের দেশে জ্বালানির সংকট প্রবল। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাসের যেমন জোগান নেই, তেমনি আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খুবই ব্যয়বহুল। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে দেশের নীতিনির্ধারকদের সবাই প্রায় একমত, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মাটির নিচের এই সম্পদ ওঠানো তাই খুবই জরুরি। এ জন্য দরকার একটি কয়লানীতি। এই জরুরি কাজটিই আটকে আছে বছরের পর বছর।
কয়লানীতি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল সেই ২০০৬ সালে। কয়লানীতির সেই খসড়ার সংশোধন হয়েছে আট দফা। এখন তা চূড়ান্ত করার পালা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে গত বছর এপ্রিলে একটি কমিটি করেছিল নীতিটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। নতুন করে আবার কমিটি হয়েছে ৮ সেপ্টেম্বরে, চূড়ান্ত করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে চার মাস। এ সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হবে, সে আশা কি আমরা করতে পারি?
কয়লা উত্তোলন একটি সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল কাজ। কয়লানীতি চূড়ান্ত হলে পরদিনই কয়লা উঠিয়ে কাজে লাগানো যাবে, বিষয়টি তা নয়। পাঁচ বছরেও যদি একটি নীতি চূড়ান্ত করা না যায়, তবে এই প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক যে কবে এই নীতি চূড়ান্ত হবে, আর কবে সেই নীতি সামনে রেখে দেশের কয়লাসম্পদ তোলা ও ব্যবহারের কাজ শুরু হবে। কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো অজানা কিছু নয়। মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া, কৃষির ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি—এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনার বিষয়। কোন পদ্ধতিতে কয়লা ওঠানো হবে, তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থ ও চূড়ান্ত বিচারে অর্থনৈতিক বিবেচনায় যেটা লাভজনক, সেটাই বেছে নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বিষয়টি নিয়ে ঝুলে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে, অথচ কয়লানীতি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে, তা হতে পারে না। দেশীয় কয়লার ব্যবহার বা কয়লা আমদানি—যে পথই হোক না কেন, সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমান কমিটিকে কয়লানীতি চূড়ান্ত করার জন্য যে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের মধ্যেই কাজটি চূড়ান্ত হবে—সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ নিয়ে আর কোনো সিদ্ধান্তহীনতা দেখতে চাই না।

No comments

Powered by Blogger.