সাগর-রুনি হত্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী-সরকারের পক্ষে বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই সাংবাদিককে নিজেদের ঘরে মারা হয়েছে। সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।


পাশাপাশি নিহত দম্পতির বেঁচে যাওয়া শিশুসন্তান মাহির সরওয়ার মেঘের কাছে খুনের বর্ণনা জানতে চেয়ে সাংবাদিকদের তৎপরতাকে ‘অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এতটুকু বাচ্চাকে এভাবে সাক্ষাৎকারের নামে জিজ্ঞাসাবাদ করা ঠিক হয়নি। সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বারবার ছোট শিশুটিকে জিজ্ঞাসাবাদের কারণে তার মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মেঘের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় হত্যাকারীরা এখন আড়ালে চলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী এই হত্যার ঘটনায় তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব ঘটনায় ছোট্ট শিশুদের যেন রেহাই দেওয়া হয়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় গোয়েন্দা ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে কেউ যাতে আলামত নষ্ট না করে, সে জন্যও প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি আহ্বান জানান।
১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া বাসায় শয়নকক্ষে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। এখন পর্যন্ত হত্যাকারীদের চিহ্নিত কিংবা গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার সমালোচনা করে গত বুধবার ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ করেছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের বিভক্ত সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন পর একসঙ্গে সমাবেশ করে ২৭ ফেব্রুয়ারি এক ঘণ্টা কর্মবিরতি এবং ১ মার্চ অনশনের কর্মসূচি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সাংবাদিকেরা এক হয়েছেন। সাংবাদিক মানিক সাহা, হুমায়ুন কবীর বালু হত্যাকাণ্ডের পর যদি সাংবাদিকেরা এভাবে নামতেন, তাহলে হয়তো আজ এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। সে সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তাই হয়তো সাংবাদিকেরা ভয়ে রাস্তায় নামেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তবে অনেক সময় মিথ্যা, অসত্য তথ্য দিচ্ছে এবং মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে।
বিএনপি অগণতান্ত্রিক পন্থা খোঁজে: প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে সব সময় অগণতান্ত্রিক পন্থা খোঁজে। জনগণের প্রতি আস্থা নেই বলেই তারা বাঁকা পথে ক্ষমতায় যেতে চায়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। জনগণই ঠিক করবে কারা ক্ষমতায় আসবে।
দেশের জনগণকে গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ও বর্তমান সরকারের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির পাঁচ বছর ছিল অন্ধকার সময়। তাঁর দাবি, গত তিন বছরে দেশকে তিনি আত্মমর্যাদাশীল পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এ সময়ে ১০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমা কমেছে।
তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভায় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সঞ্চালক ছিলেন সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাহউদ্দিন সিরাজ। মতবিনিময়ের শুরুতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন এবং জেলার সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান।

No comments

Powered by Blogger.