প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু সন্তোষজনক কি?-ঝরে পড়া শিশুদের কথা

ঝরে পড়া অপক্ব ফলের মতো স্কুল থেকে ঝরে যায় আমাদের শিশুরাও। সরকারের কাছে তা কেবল একটি পরিসংখ্যান হয়তো, কিন্তু জাতির জীবনে তা এক দুঃখজনক বাস্তবতা। যে শিশুটি আর স্কুলে আসতে পারল না, তার জীবন থেমে গেল। দারিদ্র্যের কারণে যে মা-বাবা পাঠশালা থেকে নিয়ে এসে সন্তানকে জীবনের করুণ-কঠিন পাঠশালায় পাঠান,


তাঁদের কাছে তা মস্ত পরাজয়। সেই গানটির মতো, ‘এই পৃথিবীর পরে,/ কত ফুল ফোটে আর ঝরে।/ সে কথা কি কোনো দিন,/ কখনো কারও মনে পড়ে’! কারও মনে পড়ুক বা না পড়ুক, সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কখনোই এটা ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
প্রতিবছর যত শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তার মোটামুটি অর্ধেকই পঞ্চম শ্রেণী পার হওয়ার আগেই ঝরে যায়; এমনটাই ছিল স্বীকৃত সত্য। অনেক শিশু বিদ্যালয়ে প্রবেশেরই সুযোগ পায় না। সরকার বা এনজিওর শিক্ষা বিস্তার কর্মসূচি বরাবর তাদের নাগালের বাইরে থেকে যায়।
তবে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার এই সাবেক চিত্রটি মনে হয় বদলাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার দৃষ্টিগোচরভাবে কমে আসছে। অবশ্য সরকারের গণসাক্ষরতা অভিযানের কার্যক্রম পরিচালকের কথাটিও উপেক্ষণীয় নয়। গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় এ-বিষয়ক প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় কোন পদ্ধতিতে ঝরে পড়ার নতুন এই তথ্য পেয়েছে, সেটা না জেনে মন্তব্য করা যাবে না।’ যেহেতু মন্ত্রণালয় দেশের মাত্র ৩৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এটা বলেছে এবং যেহেতু দেশে মোট সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার, সেহেতু নতুন তথ্যটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র হাজির করছে না। তাই ঝরে পড়ার হার ৪০ শতাংশের বেশি হোক বা ২১ শতাংশই হোক, তা আসলে পূর্ণ গ্লাসের অর্ধেক ভরা, না অর্ধেক খালি, সেই বিতর্কের মতো। যেখানে অনেক শিশু এখনো স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত, সেখানে আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নেই। সব শিশুর স্কুলে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি ঝরে পড়ার হার শূন্যে নিয়ে আসার চেষ্টাই নিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

No comments

Powered by Blogger.