মাদকের বিস্তার-জীবনবিনাশী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪২তম অধিবেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক (সিদ্ধান্ত ৪২/১২) প্রতিবছর ২৬ জুন মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালিত হয়। গতকালও সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা উদ্যোগ-আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে।


গতকাল কালের কণ্ঠসহ প্রায় সব কয়টি দৈনিকে এ সম্পর্কিত একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনগুলোতে যেসব তথ্যচিত্র উপস্থাপিত হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক এবং বিদ্যমান এই চিত্র একটি সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বব্যাপী মাদকের ছোবল এখন ভয়াবহ পর্যায়ে পেঁৗছেছে এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দারিদ্র্যপীড়িত এই বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় মাদকের দংশন যে ভয়াবহ ও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, এর ফলে শুধু যে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হচ্ছে তা-ই নয়, একই সঙ্গে বেড়ে ওঠা অর্থাৎ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সামাজিক আন্দোলন-সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ইত্যাদি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অধিকতর বেগবান হলেও কোনোভাবেই মাদকের ছোবল থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
মাদক কতটা সহজলভ্য হয়ে পড়েছে এবং বেড়ে ওঠা প্রজন্ম কিভাবে ক্রমেই মাদকের আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে, গতকাল প্রকাশিত কালের কণ্ঠে 'হাত বাড়ালেই পেথিডিন-মরফিন' শিরোনামের প্রতিবেদনে এর সাক্ষ্য মেলে। শুধু ঢাকায়ই নয়, মফস্বলের অলিগলিতেও হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক এবং এর সর্বনাশা থাবায় সম্ভাবনাময় অসংখ্য জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে মাদক সেবনে যুবসমাজকে অন্ধকার জগতে টেনে নেওয়া হচ্ছে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলগুলোর ব্যর্থতার চিত্রও ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব সংস্থা কিংবা অনেক দায়িত্বশীলের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, প্রায় ৪৩ হাজার মাদকসংক্রান্ত মামলা আদালতে ঝুলছে। দুর্বল তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত_সব শ্রেণীর কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী এমনকি শিশুরা পর্যন্ত নতুন করে মাদকাসক্ত হচ্ছে। সীমান্ত পথে মাদকদ্রব্যের দেদার অনুপ্রবেশের সংবাদ পত্রপত্রিকায় প্রায়ই মেলে। যারা মাদক আনে কিংবা সরবরাহ করে তাদের খুঁটির জোর কিংবা শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, বিদ্যমান পরিস্থিতি সে সাক্ষ্যই বহন করে। অকার্যকর নীতিমালা নিয়ে নামমাত্র দায়িত্ব পালন করছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অন্যদিকে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, নিরাময় কেন্দ্রেই হচ্ছে মাদকের ব্যবহার।
মাদকের আগ্রাসনকে এক নম্বর সামাজিক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে এ থেকে উত্তরণের জন্য পরিকল্পিত কঠোর পদক্ষেপ সম্মিলিতভাবেই নিতে হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ তৎসংশ্লিষ্ট সব কিছু ঢেলে সাজিয়ে চালাতে হবে চিরুনি অভিযান। এর উৎস সন্ধানের পাশাপাশি এই বিষবৃক্ষের ডালপালা না ছেঁটে শিকড় উৎপাটনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ী, মাদক গ্রহণকারী, সরবরাহকারী_সবাই দেশ ও জাতির শত্রু। এদের ব্যাপারে উদাসীন থাকার কোনো অবকাশ নেই। ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং অবশ্যই এ ব্যাপারে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে সব কিছুর ঊধর্ে্ব ওঠে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সবাইকে জবাবদিহিতা-দায়বদ্ধতার আওতায় আসতে বাধ্য করতে হবে। দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতার জন্যও শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা চাই। মানবতা-সভ্যতা-স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা বিনষ্টসহ জীবনবিনাশী কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.