জিয়াউর রহমানের বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পেয়েছে by তানজির আহমেদ রাসেল

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমানের মেধা ও বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ তাহের-ইনুদের ষড়যন্ত্র প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, ৭ই নভেম্বর তাহের-ইনু চক্র জনপ্রিয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের কাঁধে ভর করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল। জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছতে চেয়েছিল। কিন্তু অসম সাহসী বিচক্ষণ ও দেশপ্রেমিক জিয়াউর রহমান ইনু-তাহের চক্রের পাতা ফাঁদে পা দেননি। নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে এরা এখন মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়। বুধবার লন্ডনে দ্যা অ্যাট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা এডভোকেট আসাদুজ্জামান, যুক্তরাজ্য যুবদলের আহ্বায়ক দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নেওয়াজ, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাসির আহমেদ শাহীন, যুক্তরাজ্য জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী তরুণ দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শরফরাজ শরফু প্রমুখ। সভায় জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের সামগ্রিক দিক তুলে ধরে তারেক রহমানের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপদেষ্টা মাহদী আমীনের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। 
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বা ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমানের কাছে পদ পদবি বা নেতৃত্বের চেয়ে দেশের স্বার্থই বড় ছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে ২৫শে মার্চ শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের পর নেতৃত্বশূন্য স্বাধীনতাকামী মানুষের সামনে ২৬শে মার্চ  বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তীতে লাখো মুক্তিযোদ্ধাকে সংগঠিত করে লড়াই করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শেখ মুজিব ৭ই  মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, ২৫শে মার্চও দেননি বরং তাজউদ্দীন আহমদ তাকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই দেখেননি। দেখেননি তাদের দুঃখ, কষ্ট ও বীরত্বগাথা। এ কারণে লালঘোড়া দাবড়ানোর নামে নির্বিচার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা তিনিই শুরু করেন। জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ছেড়ে দেন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের।
তারেক রহমান বলেন, এই চক্রটি এতদিন প্রচার করে আসছিল, ৭ই নভেম্বর নাকি ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে তারা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিল। তবে জিয়াকে ঘিরে জঙ্গি ইনু তাদের ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান ২০১০ সালের ৭ই নভেম্বর সংখ্যায় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হাসানুল হক ইনু’র একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। সেখানে ইনু বলেন, “তাহের ও আমার মূল পরিকল্পনায় জিয়াকে গ্রেপ্তার করে আনার নির্দেশ ছিল। হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদারের দায়িত্ব ছিল বন্দী জিয়াকে মুক্ত করা এবং তাকে ৩৩৬ নম্বর এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় নিয়ে আসা। সেখানে তাহের ও আমি জিয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের এ পরিকল্পনা সফল হয়নি”।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ তথা গণবাহিনীকে ১৯৭৫ সালে জনগণ অপশক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছে। সেই সময় প্রথমে আওয়ামী বাকশালী অপশক্তিকে পরাস্ত করে গণবাহিনী।  আর ৭ই নভেম্বর সেনা ও জনগণের মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে জনগণ। তিনি বলেন, এখন আবার এই সব পরাজিত অপশক্তি ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়ে মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে। তিনি সবাইকে এই সব অপশক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
তারেক রহমান আরও বলেন, এই অপশক্তির মনে রাখা প্রয়োজন, জিয়াউর রহমানের মতো এমন একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের ক্ষমতার জন্য কোন ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিতে হয় না। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই  আগস্টের পটপরিবর্তন কিংবা ৭ই নভেম্বরের সিপাহি জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অভ্যুত্থান কোন ঘটনাতেই জিয়াউর রহমান ক্ষমতার লোভ দেখাননি। ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান পরিণত হন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীকে।
তারেক রহমান বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার শুধু অবৈধই নয়, কুইক রেন্টালের ভর্তুকির নামে শেখ হাসিনা জনগণের ৩৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। অথচ বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশ। তারেক বলেন, এই দুর্নীতিবাজ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। এই অবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। সভায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এমএ মালেক, তারেক রহমানের বিশেষ রাজনৈতিক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, তথ্য ও গবেষণা উপদেষ্টা মাহদী আমিন, মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল হামিদ চৌধুরী, সহসভাপতি আক্তার হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ মল্লিক, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ-সম্পাদক তাজউদ্দিন,  এডভোকেট তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সেলিমসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.