চোরাকারবারিদের আঘাতে বিজিবি কমান্ডারের মৃত্যু

চোরাচালান দমন করতে গিয়ে সাংবাদিক নামধারী দুই চোরাচালানির লাথির আঘাতে প্রাণ হারালেন সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী সাতক্ষীরার ভোমরা বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার নজরুল ইসলাম। সাতক্ষীরার লক্ষ্মীদাঁড়ি সীমান্ত বেড়িবাঁধের মেইন পিলার-২ এর কাছে বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনতা দুই ঘাতককে আটক করে বিজিবির হাতে তুলে দিয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সাতক্ষীরার ৩৮ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকসি জানান, সকাল ৯টার দিকে বেড়িবাঁধের ওপর ঘোষপাড়ার সামনে বিজিবির তিন সদস্য নায়েক মুন্নুুুু মোল্লা, সিপাহী আনোয়ার ও সিপাহী রবিউল টহলে ছিলেন। এ সময় তারা বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে দুই ব্যক্তিকে ভারত ও বাংলাদেশের জিরো পয়েন্টের ছবি তুলতে দেখেন। বাধা দিলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তারাও চ্যালেঞ্জ করে ফের ছবি তুলতে থাকে।এ খবর পেয়ে বিজিবির ভোমরা কোম্পানি সদর দফতর থেকে কমান্ডার সুবেদার নজরুল ইসলাম সেখানে ছুটে যান। নিজেদের সাংবাদিক দাবি করে তারা বলেন, দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার দুই সাংবাদিক হাবিব ও রিয়াজের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা এখানে ছবি তোলার ট্রেনিং নিচ্ছেন। তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে সুবেদার নজরুল তাদের দেহ তল্লাশি করে কিছু ফেনসিডিল ও ভারতীয় মদ পান। এরই মধ্যে স্থানীয় গ্রামবাসী সেখানে জড়ো হয়ে নিশ্চিত করেন যে তারা সাংবাদিক নয়; চিহ্নিত রসুন চোরাচালানি। বিজিবি সুবেদার তাদের কাছে পরিচয়পত্র চাইতেই তারা তার তলপেটে কয়েকটি লাথি মেরে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়রা মুহূর্তেই তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। লাথির আঘাতে প্রচণ্ড ব্যথা পাওয়া নজরুল ইসলামকে (৫৬) অচেতন ও আহত অবস্থায় সাতক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাংবাদিক পরিচয়দাতা দুই ঘাতক চোরাকারবারি সাতক্ষীরার মাহমুদপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে আনোয়ার হোসেন পলাশ (৩২) এবং বাটকেখালী গ্রামের তবারক মোল্লার ছেলে রনি মোল্লাকে (২০) গ্রেফতার করে বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।খবর পেয়ে বিজিবির খুলনা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খলিলুর রহমান, ৩৮ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ বকসিহ বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। দুপুরে সাতক্ষীরা মর্গে নজরুল ইসলামের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। পরে তার সহকর্মীরা তাকে নিয়ে যান ব্যাটালিয়ন সদরে। সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিজিবি খুলনা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল খলিলুর রহমান, জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, অধিনায়ক মেজর নজির আহমেদ, যশোর আরআইবি অধিনায়ক মেজর আজাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।সুবেদার নজরুলের বাড়ি রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার মাগুরাডাঙ্গী গ্রামে। তিনি স্ত্রী তামান্না জাকিয়া ও মা আছিয়া খাতুনসহ এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। বিকালে ময়নাতদন্ত ও জানাজা শেষে নজরুল ইসলামের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.