জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা আজ শুরু

অবশেষে নির্ধারিত সময়ের ৫ দিন পর আজ জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তবে এ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। হরতালের কারণে মাঝ পথে কখন যে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউই। এ অবস্থায় খোদ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাই মাঠে নেমে এসেছেন। পালন করছেন বিভিন্ন কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিভাবকরা তাদের উৎকণ্ঠার কথা জানান। একই সঙ্গে তারা পরীক্ষাকালে হরতালের বিকল্প কর্মসূচি দেয়ারও আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বিচারপতি, সরকারি আমলা, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা পরীক্ষার সময়ে হরতালের মতো কর্মসূচি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ সময় বিরোধী দল হরতাল দিতে বাধ্য হয়, এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এবারের এ পরীক্ষায় সারা দেশে মোট ২০ লাখ ৯০ হাজার ৬৯২ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে জেএসসিতে ১৮ হাজার ৮১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। তাদের মধ্যে ছাত্র ৮ লাখ ৩০ হাজার ২৫৬ এবং ছাত্রী ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৩৩৯ জন। মোট ১ হাজার ৮০৩টি কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আর জেডিসিতে ৯ হাজার ১১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ এবং ছাত্রী ১ লাখ ৭১ হাজার ১৭০ জন। জেডিসি পরীক্ষা সারা দেশে ৭২২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। জেএসসি পরীক্ষা হচ্ছে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আজ মতিঝিলের সরকারি বালক ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা সরেজমিন পরিদর্শন করবেন।গত ২ নভেম্বর এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশসহ রায় দেন। এর প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী তিন দিনের যে হরতাল ডাকে, তাতে ২ ও ৩ নভেম্বরের পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়। এরই মধ্যে ২ নভেম্বর জামায়াতের আরেক নেতা মীর কাসেম আলী এবং ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানের মামলার রায় প্রদান করা হয়। এই দু’রায়ের প্রতিবাদেও জামায়াতে ইসলামী ৫ ও ৬ নভেম্বর হরতাল ডাকে। এর ফলে একে একে চার দিনের পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। স্থগিত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই মূলত আজ শুরু হচ্ছে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা। এদিন স্থগিতকৃত ২ নভেম্বরের পরীক্ষা নেয়া হবে। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নেয়া এ পরীক্ষার মধ্যে জেএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র এবং জেডিসিতে কোরআন মজিদ ও তাজবিদ বিষয় থাকছে। গতবছরও হরতালের কারণে এ পরীক্ষা বিঘিœত হয়। তখন ৪ নভেম্বরের পরিবর্তে ৭ নভেম্বর শুরু হয় এ পরীক্ষা। হরতালের কারণে ইতিপূর্বে স্থগিতকৃত ৩ নভেম্বরের পরীক্ষা ১৪ নভেম্বর নেয়া হবে। ওই দিন জেএসসির বাংলা দ্বিতীয় পত্র আর জেডিসির আকাইদ ও ফিকাহ এবং আত-তাওহিদ ওয়ালফিকহ (অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য) অনুষ্ঠিত হবে।একই কারণে স্থগিত করা ৫ নভেম্বরের জেএসসির ইংরেজি প্রথম পত্র ও জেডিসির আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা আগামী ১৯ নভেম্বর বুধবার সকাল ১০টা থেকে এবং ৬ নভেম্বরের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ও জেডিসির আরবি দ্বিতীয় পত্র আগামী ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে।সংবাদ সম্মেলন : এদিকে পরীক্ষা সামনে রেখে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবক ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু জানান, হরতালের কারণে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী শুরু করা যায়নি জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। বারবার পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা আজ চিন্তিত। তা ছাড়া বারবার পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি বিঘ্নিত ও মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। তিনি হরতালকে ‘আত্মঘাতী’ উল্লেখ করে বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসকারী হরতাল পরিহার করা উচিত। বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষাকালে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হরতালের বিকল্প কর্মসূচি দেয়ার আহ্বান জানাই। এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সেলিম মিয়া, সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.