রায় কার্যকর নিয়ে নানা মত

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দণ্ডাদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ পিটিশন, তার পরে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা জানিয়েছে আসামী পক্ষ। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, রায় পূর্ণাঙ্গ না সংক্ষিপ্ত সেটি সম্পূর্ণ আপিল বিভাগের বিষয়। ৩রা নভেম্বর চূড়ান্ত রায়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখার পর থেকেই নানা মত সংবাদ মাধ্যমে আসছে। গতকালও কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তার আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির রিভিউ পিটিশন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে দণ্ড কার্যকর করা যাবে বলে মত ব্যক্ত করেন।
‘আগে রিভিউ পরে প্রাণ ভিক্ষার সিদ্ধান্ত’
আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামান দণ্ডাদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রিভিউ পিটিশন দাখিল করবেন। রিভিউ পিটিশন তার পক্ষে না এলে এরপর সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না। সরকার তাকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বেআইনিভাবে হত্যা করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তার আইনজীবীরা। গতকাল সকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তার আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের একথা জানান। পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাতের জন্য কামারুজ্জামানের পাঁচ আইনজীবী সকাল সাড়ে ৯টায় কারাগারের সামনে উপস্থিত হন। পরে চারজনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। কামারুজ্জামানের সঙ্গে ৪০ মিনিট সাক্ষাৎ করে আইনজীবীরা  বেলা ১১টায় কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।
কারাফটকে অপেক্ষারত সাংবাদিকদের কামারুজ্জামানের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল বেআইনি কথা বলছেন। আইনমন্ত্রী কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকর করার প্রস্তুতির যে নির্দেশ দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে এমন কোন নির্দেশ আসেনি। সুপ্রিম  কোর্ট থেকে নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কোন সুযোগ নেই। তারা আইনবহির্ভূতভাবে কথা বলছেন। এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য আশা করা যায় না। রায়ের কপি পেলেই ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করা হবে। যেমন ভাবে করা হয়েছিল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায়ের পর।
তিনি আরও বলেন, রিভিউ পিটিশন করার সময় এর সঙ্গে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি জমা দিতে হবে। তা না হলে কোথা থেকে আমরা এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাবো? সংবিধানের ১০৫ ধারা ও ট্রাইব্যুনাল ৪৭ ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রিভিউ করতে পারবেন বলে উল্লেখ আছে। আমরা রায় পর্যালোচনা করছি। রায়ের কপি পেলেই আপিল বিভাগে রিভিউর আবেদন করা হবে।
কামারুজ্জামানের বরাত দিয়ে তার আইনজীবী শিশির মনির আরও  বলেন, তিনি (কামারুজ্জামান) দাবি করেছেন, শেরপুরের সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হলো সেই  সোহাগপুরের নাম কামারুজ্জামান আগে কখনও শোনেন নি। এটি একটি সম্পূর্ণ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় বলে তিনি আমাদেরকে জানিয়েছেন। কামারুজ্জামান কেমন আছেন সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তার আইনজীবী বলেন, তিনি সুস্থ ও ভাল আছেন। তাকে বিচলিত মনে হয়নি। এ সময় এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন ও এডভোকেট মশিউল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পাঁচজন সদস্যকে ভেতরে প্রবেশের পূর্ব অনুমতি দেয়া হলেও পরে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এডভোকেট শিশির মনিরের কথা কাটাকাটি হয়।
‘এক সপ্তাহ হতে পারে, আবার তিন দিনও হতে পারে’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর সময়ের ব্যাপার মাত্র- এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, এটা এক সপ্তাহ হতে পারে আবার তিন দিনও হতে পারে। এটা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে এক মাসও হয়ে যেতে পারে। গতকাল নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন। সংক্ষিপ্ত না পূর্ণাঙ্গ রায়ের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হবে তা আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলেও মন্তব্য করেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগ বহাল রেখেছে। আপিল বিভাগের রায় ট্রাইব্যুনালে গেলে ওই আদালত মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে। এখন পূর্ণাঙ্গ না সংক্ষিপ্ত রায় পাঠাবেন সেটি সম্পূর্ণরূপে আপিল বিভাগের বিষয়। এটর্নি জেনারেল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন দণ্ডের পরিবর্তে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। যেহেতু সর্বোচ্চ আদালত ট্রাইব্যুনালের রায় পরিবর্তন করেছিল সেহেতু ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রয়োজন পড়েছিল। তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ রায় নয়, সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে দণ্ড কার্যকর করা যাবে বলে আমি মনে করি। কারণ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়টি বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।

No comments

Powered by Blogger.