মঙ্গলে খনিজের খোঁজ

লালগ্রহের চারদিকে পাক খাওয়ার সময় মহাশূন্য থেকেই প্রাথমিক সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে ফেলেছিল মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার যন্ত্রযান। বুধবার সেই হিসেব অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিল মার্স কিউরিওসিটি রোভার। মঙ্গলগ্রহের মাউন্ট শার্পের কাছ থেকে মিললো প্রথম খনিজ পদার্থের সন্ধান। মাউন্ট শার্পের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় সেপ্টেম্বর নাগাদ ‘কনফিডেন্স হিলের’ সামনে এসেছিল কিউরিওসিটি। তখনই এই পাহাড়ের একটি পাথরের টুকরোয় ফুটো করে ভেতর থেকে কিছুটা লাল গুঁড়ো বের করেছিল কিউরিওসিটির যান্ত্রিক হাত। যন্ত্রযানের মধ্যেই বসানো ছোটখাটো রাসায়নিক গবেষণাগারে ওই লাল গুঁড়োর বিশ্লেষণের কাজ শুরু করে কিউরিওসিটি। নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলের পাথর থেকে পাওয়া ওই লাল গুঁড়ো আসলে হেমাটাইট। আরও পরিষ্কার করে বললে, লোহার একটি খনিজ হল হেমাটাইট। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এভাবে পাওয়া হেমাটাইটে লোহার পরিমাণ কতটা সেই শতাংশের বিচার করে লালগ্রহের অতীত ইতিহাস অনেকটাই স্পষ্ট হবে বিজ্ঞানীদের কাছে।
প্যাসাডেনার ক্যালিফর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অন্যতম গবেষক এবং নাসার মঙ্গল অভিযানের সঙ্গে যুক্ত জন গ্রটজিঙ্গার জানিয়েছেন, ‘মহাকাশ থেকে কোনো গ্রহের পৃষ্ঠতলের গভীরে কোথায় খনিজ পদার্থ রয়েছে, তার অস্তিত্ব জানার উপায় এতদিন অনেকটাই ছিল তত্ত্বগত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করা। কিন্তু, মঙ্গলগ্রহের ক্ষেত্রে যা হল, তা এক কথায় অবর্ণনীয়।’
যেখানে যেখানে খনিজ পদার্থ রয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছিল, তার মাত্র একটি জায়গাতেই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। প্রথম চোটেই অভাবনীয় সাফল্যে রীতিমতো উত্তেজিত নাসার বিজ্ঞানীরা। ২০১০ সালে কেবল মঙ্গলে থাকা খনিজের অস্তিত্ব জানার জন্যই একটি বিশেষ মহাকাশযান পাঠায় আমেরিকা। ‘মার্স রিকনেইসান্স অরবাইটার’ নামের ওই যানটি তখন থেকেই মঙ্গলের সম্ভাব্য খনিজ পদার্থময় অঞ্চলগুলোর একটি মানচিত্র তৈরি করে। মঙ্গলের গেইল ক্রেটার ছিল তেমনই একটি অঞ্চল। পরে, প্রায় ১৫৪ কিলোমিটার চওড়া এই প্রাচীন জ্বালামুখে মহাকাশযান কিউরিওসিটি রোভারকে নামানোর কথা ঠিক হয়। অবতরণের পর প্রথমে এই জ্বালামুখের মধ্যেই ‘ইয়েলোনাইফ বে’ নামে একটি নিচু অঞ্চলে অনুসন্ধানের কাজ চলে। এই অঞ্চলের পাথরের গঠন ও ক্ষয় দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, এক সময় এই অঞ্চলে জলের ধারা প্রবাহিত হতো। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.