শেষ দিনেও নিরুত্তাপ হরতাল

জামায়াতের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের শেষ দিনেও কোনো উত্তাপ ছিল না। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে এ কর্মসূচি। তবে হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাÍক ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রতিদিনের হরতালে কয়েকশ কোটির টাকার ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। হরতালে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পরিবহন বন্ধ থাকায় তৈরি পোশাকও সময়মতো রফতানি করা যায়নি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার হরতাল না দেয়ার দাবি তোলা হলেও রাজনৈতিক দলগুলো তা আমলেই নিচ্ছে না। হরতালের কবলে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে জেএসসি ও জেডিসির বেশ কয়েকটি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, ঝটিকা মিছিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম। যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে। সারা দেশ থেকে শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে উচ্চ আদালতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা ও দলটির কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড দেয়ার প্রতিবাদে বুধবার ভোর থেকে আজ ভোর পর্যন্ত এ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।সকাল থেকে রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বাড়তে থাকে। দুপুরের পর রাজধানীর অনেক স্থানে যানজট লক্ষ্য করা যায়। রাজধানীর অলি-গলির দোকানপাট ছিল খোলা। দুপুরের পর বড় বড় শপিংমলও খুলতে থাকে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠাগুলোর কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক।হরতালের প্রথম প্রহরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। দুপুরে ধানমণ্ডিতে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় ৫ জন আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। বাড্ডায় মিছিল সমাবেশ করে জামায়াত-শিবির। এছাড়া তেজগাঁও কলেজ ও মহাখালীতে ছাত্রশিবির মিছিল বের করে। এ সময় শিবিরের ক্যাডাররা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে আতংক সৃষ্টি করে।সারা দেশে হরতাল : দেশের বিভিন্ন স্থানে ঢিলেঢালাভাবে হরতাল শেষ হয়েছে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-বরিশাল : ভোরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গড়িয়ারপাড় এলাকায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে পিকেটাররা। পরে নতুনবাজার এলাকায় একটি মিছিল বের করা হয়। এ সময় ধাওয়া করে জামায়াত-শিবিরের দুজনকে আটক করে পুলিশ। দূরপাল্লার সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। অভ্যন্তরীণ রুটে বাস ও লঞ্চ চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীতে দোকানপাট খুলতে শুরু করে। অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা এবং স্কুল-কলেজ যথারীতি খুলেছে।চট্টগ্রাম : দেওয়ান বাজার এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হরতালবিরোধী মিছিলে গুলিবর্ষণ হয়েছে। ছাত্রলীগ এজন্য জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে। তবে সিএমপির কোতোয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, মিছিলে কেউ হামলা বা গুলি করেনি। ছাত্রলীগের দুগ্র“পের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার জের ধরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। নগরীতে দোকানপাট ছিল খোলা। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে দূরপাল্লার যানবাহন তেমন একটা চলাচল করেনি। নগরী ও জেলায় পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে বিজিবি।সিলেট : বুধবার রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। তারা ২০-২৫টি যানবাহন ভাংচুর ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন দিয়েছে। শাহপরাণ এলাকায় হরতাল সমর্থকদের ঢিলের আঘাতে আহত হয়েছেন এক অটোরিকশা চালক। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর শিবগঞ্জে একটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা।রাজশাহী : সকাল ৭টার দিকে মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডলের নেতৃত্বে নগরীর মনিচত্বর থেকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। হেতেমখাঁ এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে।বগুড়া : শহরতলির সাবগ্রাম, চারমাথা ও ছিলিমপুর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে। বুধবার পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল হামলার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের ৯২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কাহালুর বাবলাতলা এলাকায় পুলিশ শিবিরের চার সভাপতিসহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।গাজীপুর : হরতালে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের ৮৫ জনের নামোল্লেখসহ ৩৭ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মোট ১২২ জনের নামে মামলা হয়েছে। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীসহ ৪১ জনকে আটক করেছে।ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : হরতালের কারণে পরিবহননির্ভর এ ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ছিল বন্ধ। এতে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।বরগুনা ও বামনা : উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি বোমা ও বোমা তৈরির উপকরণসহ বামনায় ৩ জামায়াতকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে ফেরিঘাট এলাকা থেকে আবদুল লতিফ ওরফে বাবুল ও গিয়াস উদ্দীন এবং বৃহস্পতিবার সকালে লিটনকে আটক করে পুলিশ।কলাপাড়া : বুধবার রাতে কুয়াকাটা সৈকত থেকে মিরাজ নামে এক শিবিরকর্মীকে আটক করে কুয়াকাটা নৌপুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ সময় তার ব্যাগ থেকে লিফলেট ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়।মানিকগঞ্জ : ঘিওর ও সিংগাইর থেকে জামায়াত এবং বিএনপির ৩ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত পৃথক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। তারা হল- রশিদ, শুকুর আলী ও ইসমাইল হোসেন।কুলাউড়া : হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। এ সময় উপজেলা জামায়াতের আমীর আবদুল বারীসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ।নোয়াখালী : সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া বাজারে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয় গ্র“পের ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ৫০/৬০ রাউন্ড টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

No comments

Powered by Blogger.