আধুনিক কবিতার ভবিষ্যৎ : ক্যারোল অ্যান ডাফির ভাবনা by আহমেদ বাসার

ব্রিটেনের প্রথম নারী পোয়েট লরিয়েট ক্যারোল অ্যান ডাফি ঘোষণা করেছেন, খুদে বার্তার ভাষাই কবিতার সর্বোত্তম বাহন হতে পারে। তিনি দাবি করেন, এ ভাষা নতুন প্রজন্মের তরুণ চারণ কবিদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।
৫৫ বছর বয়সী এ কবি বলেন- কবিতা হচ্ছে খুদে বার্তার একটি বিশেষ আঙ্গিক। এটাই প্রকৃত ‘টেক্সট’। এটা অনুভবের একটি শুদ্ধতম রূপ, যা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এর মধ্য দিয়ে কম কথায় অনেক বেশি কিছু বলা যায়।
পোয়েট লরিয়েট মনে করেন- খুদে বার্তার সংক্ষিপ্ত ভাষার ওপরই আধুনিক কবিতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তিনি বলেন- আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, ফেসবুক প্রজন্মই আমাদের ভবিষ্যৎ এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কবিতাই তাদের জন্য উপযুক্ত মাধ্যম। এটা এক ধরনের সময় ক্যাপসুল- যা অনুভব ও ধারণাকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বহুদূর ভ্রমণে উৎসাহিত করে। তিনি আরও যোগ করেন, কবিতা একুশ শতকের অন্যতম সাহিত্য আঙ্গিক।
মিস ডাফি ইংল্যান্ডের ৩৪১ বছরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মনোনীত কোনো নারী পোয়েট লরিয়েট। যিনি ১০ বছরের জন্য অ্যান্ড্র– মোশানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন ২০০৯ সালে। প্রতি বছর তিনি পাঁচ হাজার পাউন্ড করে সম্মানী পাবেন।
ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনির্ভাসিটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার মন্তব্যগুলো নিয়ে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে যা তাদের নিজস্ব কাব্যসংকলনের জন্য সহায়ক হবে।
ডাফি- যিনি ২০০৯ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্রিটেনের প্রথম নারী পোয়েট লরিয়েট- বলেন, তিনি স্কুলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কবিতা লেখা শেখানোর ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কবিতাই একুশ শতকের অনিবার্য সাহিত্য মাধ্যম। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে তরুণদের ভাষার সঙ্গে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট করা সম্ভব। যে ভাষা খেলার মতোই আকর্ষণীয়।
ডাফি এরই মধ্যে উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ, আলফ্রেড লর্ড টেনিসন, জন বেজামেন ও টেড হিউজের মতো বিশাল নামগুলোর কাতারে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছেন।
পোয়েট লরিয়েট সরকারের পরামর্শে ব্রিটেনের রানী কর্তৃক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কবি। টনি ব্লেয়ার ১৯৯৯ সালে ১০ বছরের জন্য এর সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।
পোয়েট লরিয়েটের দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজপরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান অনুষ্ঠান ও কর্মকাণ্ডকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য কবিতা রচনা করা।
ডাফি বহু আগ থেকেই রাজবংশীয় ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে কবিতা রচনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে তাকে যখন এ পদের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছিল তখন প্রিন্স এডওয়ার্ড ও সোফির বিয়ের আয়োজন চলছিল। তখন তিনি বলেছিলেন- আমি এডওয়ার্ড ও সোফির জন্য কোনো কবিতা রচনা করব না। কোনো আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন কবিরই তা করা উচিত নয়।
এছাড়া এরকম অভিযোগও প্রচলিত যে, টনি ব্লেয়ার একজন সমকামিকে পোয়েট লরিয়েট হিসেবে নিয়োগ দানের ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিগ্ধ ছিলেন। ২০১১ সালে ডাফি একটি কাব্যসংকলনের মোড়ক উন্মোচিত করেছিলেন, যা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়েছিল। তিনি প্রত্যেককে তাদের নিজস্ব কাব্যসংকলনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন- তারা যে কোনো ভাবে এটি করতে পারে। এটি হতে পারে দলবদ্ধভাবে, হতে পারে শ্রেণী কিংবা স্কুলের একটি কবিতার দল অথবা সাধারণভাবে একজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে হলেও সমস্যা নেই। কাব্যসংকলনটি তারা যেভাবে চায় সেভাবে সংকলিত হতে পারে। এটা হতে পারে ভাবার্থকেন্দ্রিক কিংবা হতে পারে ইস্যুভিত্তিক। অথবা অন্য কিছু নিয়ে যা তারা পছন্দ করে। তাদের জন্য একটি বাজেট বরাদ্দ করা হবে এবং তাদেরই ভাবতে হবে তারা কীভাবে খরচ করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- তাদের মাথায় রাখতে হবে কবিতা সৃষ্টির জন্য তাদের ফি দিতে হবে। সুতরাং তারাও তাদের ভাবনার অন্তর্ভুক্ত হতে হবে যে সেই ফিটা কত হতে পারে। ডাফির নিজস্ব সৃষ্টিকর্ম বিদ্যালয়ের পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে একটি কবিতা সহিংসতাকে উৎসাহিত করার অভিযোগে বাদ দেয়া হয়েছে। ‘এডুকেশন ফর লেইজার’ নামক সহিংসতাবিষয়ক কবিতাটি অ্যা কিউ অ্যা পরীক্ষা বোর্ড ও জিসিএসই কাব্যসংকলন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এ অভিযোগে যে, এটিতে ছুরিকাঘাতে সৃষ্ট অপরাধ ও একটি গোল্ড ফিশের টয়লেটে পড়ে যাওয়ার উল্লেখ রয়েছে। ডাফি সর্বদা এটি মনে করেন, কবিতা, যা শুরু হয় এমন শব্দগুচ্ছ দিয়ে- আমি আজ কোনো কিছুকে হত্যা করতে যাচ্ছি- এটাই সহিংসতার বিরোধী।

No comments

Powered by Blogger.