একসঙ্গে কাজ করতে চান ওবামা–ম্যাককনেল

বিরোধীদের নিয়েই এগোবেন কোণঠাসা ওবামাতবে অভিবাসন, মানবপাচার রোধসহ নানা ইস্যুতে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগাবেন প্রেসিডেন্ট...
একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রিপাবলিকান নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল। ম্যাককনেল মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আল-জাজিরার।
আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে নবনির্বাচিত রিপাবলিকানদের নিয়েই একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ভূমিধস বিজয়ের পর বুধবার ওবামা এই অঙ্গীকার করেন। একই কথা বলেছেন সিনেটের রিপাবলিকান দলের নতুন নেতা মিচ ম্যাককোনেলও। সংবাদসূত্র : বিবিসি

মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরদিন বুধবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, 'প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদের বাকি দুই বছরকে যতটা সম্ভব উৎপাদনশীল করতে তিনি নতুন কংগ্রেসের সঙ্গে কাজ করবেন।' জনগণকে অনেকটা নিশ্চিত করতেই সংবাদ সম্মেলনে ওবামা বলেন, 'দুই দলই রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে ভোটারদের হতাশা উপলব্ধি করেছে। ভোটাররা কী বলতে চান, আমি তা শুনতে পেয়েছি। এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে একসঙ্গে কাজ করার একটি রাস্তা আমরা খুঁজে পাবই।' তবে রিপাবলিকানদের সঙ্গে কাজ করলেও অভিবাসন, মানবপাচার রোধসহ নানা ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের বিশেষ ক্ষমতা কাজে লাগানোর কথাও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে, শুক্রবার সেখানে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর সিনেটের নতুন রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, তিনি সিনেটকে কার্যকর এবং বিল পাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। বুধবার দেয়া এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান নেতা ম্যাককনেল সিনেটকে আরো কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে বলতে গেলে কোনো কাজই করেনি সিনেট। আমরা এখন কাজে ফিরে যাব এবং বিভিন্ন বিল পাস করার উদ্যোগ নেব। দুই দল-ভিত্তিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা মানেই এই নয় যে, আমাদের সবসময় একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষ লাগিয়ে রাখতে হবে।' এছাড়া তিনি বারাক ওবামার সঙ্গে মিলে বাণিজ্য চুক্তি এবং কর সংস্কার করারও অঙ্গীকার করেছেন।
ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের এই দুই নেতা তাদের অঙ্গীকার কতখানি টিকিয়ে রাখতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়। কিন্তু বুধবার রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান রেইন্স প্রিয়েবাস যেভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বিজয়কে মূল্যায়ন করলেন, তাতে হাতি আর গাধায় ঠোকাঠুকি খুব শিগগির থামার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়েবাস বলেন, 'রিপাবলিকানদের এই বিজয়ের অর্থ আমেরিকার মানুষ ওবামার নেয়া নীতিগুলোকে পুরোপুরি ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।' বিজয়ের এই নতুন অর্থে মিচ ম্যাককনেলরা যদি একমত হন, তবে তার অর্থ দাঁড়ায় সামনের বছরগুলোতেও রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেটরা নিজ নিজ দাবিতে অনড় থেকে সিনেটকে অকার্যকরই রেখে দেবেন। আর এমনটা ঘটার সম্ভাবনাটাই বরং বেশি। কারণ ম্যাককনেলকে নির্বাচনের আগে দলের কাছে করা নানা প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করতে হবে। তবে প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি না হয়ে সে প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা সম্ভব নয়।
বিবিসির আমেরিকান সম্পাদক জন সোপেল মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের এই বিজয়কে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, 'ওবামার জনপ্রিয়তায় ধস নামাটা এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটদের পরাজয়ের একটি বড় কারণ। ২০১২ সালে মিট রমনিকে হারানোর আগে জনমত জরিপে ৫৮ ভাগ জনসমর্থন ওবামার পক্ষে ছিল। আর ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ৪১ ভাগে নেমে এসেছে। কিন্তু এটিই একমাত্র কারণ নয়। গত কয়েক বছর ধরে আমেরিকানদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের নিয়ে প্রচ- হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগে বেশকিছু জনমত জরিপ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা গেছে। একমাত্র ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটদের হারিয়েই রাজনীতিবিদদের প্রতি এই হতাশা প্রকাশ করা যায় বলেই আমেরিকানরা রিপাবলিকান প্রার্থীদের এই বিপুল ভোট দিয়েছে। রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল আমেরিকান জনগণের এই মনোভাব ভালোভাবেই বোঝেন। তাই আশা করা যায়, জনরোষ থেকে বাঁচতে সাবধানী পদক্ষেপই ফেলবেন তিনি।'
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে ব্যাপক জয় পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। মাত্র ছয়টি আসন পেলেই যেখানে দলটি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ লাভ করত, সেখানে তারা সাতটি আসনে জয় পেয়েছে। ডেমোক্রেট ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রাজ্যগুলোতেও রিপাবলিকান প্রার্থীদের জয়জয়কার। উত্তর ক্যারোলাইনা, কানসাসে ডেমোক্রেট সিনেটরদের জয় কাঙ্ক্ষিত থাকলেও জয় পেয়েছেন রিপাবলিকানরা। এমনকি প্রেসিডেন্ট ওবামার নিজ রাজ্য ইলিনয়সেও ডেমোক্রেটদের পরাজয় ঘটেছে, জয় পেয়েছেন বিরোধী রিপাবলিকানরা। জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করতে কংগ্রেসের নতুন এই সদস্যরা।

No comments

Powered by Blogger.