ব্ল্যাকমেইল- ফেসবুকে ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি দিয়ে চাঁদা আদায় চবি ছাত্রলীগ নেতার

এক কলেজ ছাত্রীর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তোলপাড় চলছে চট্টগ্রামে। কলেজ ছাত্রীর ছবির সঙ্গে আপত্তিকর দৃশ্য জড়িয়ে তা ফেসবুকে দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছে তারা। ব্যাংক থেকে চাঁদার টাকা তোলার সময় পুলিশ তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে। আটক দুই ছাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে আটক দু’জনকে ছাড়িয়ে নিতে একটি মহল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া দুই ছাত্রলীগ নেতার নাম- রাকিব উদ্দিন ও ফরমান উদ্দিন। এদের মধ্যে রাকিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিল। বর্তমানে ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরমান উদ্দিন  সেখানকার ক্যাম্পাস শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশের নেতারা দাবি করেছেন, পুরো ঘটনাটি ষড়যন্ত্র। ওই ছাত্রীর সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রলীগ নেতাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মেয়েটির সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। সেখান থেকে মান অভিমান। আর সেই কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তারা আরও দাবি করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের কর্মীরা ওই মেয়েটিকে এমন ঘটনা ঘটাতে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তারা দু’জন বেশ কিছুদিন ধরে ওই কলেজ ছাত্রীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। সর্বশেষ মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে তাদের দুই লাখ টাকা নেয়ার রফা হয়। শর্ত হয়- টাকা পেয়ে তারা আর মেয়েটিকে কোন ধরনের বিরক্ত করবে না।
গত বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন হাটহাজারী উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় টাকা আনতে গিয়ে ধরা পড়ে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ও ফরমান। এই সময় স্থানীয় জনতা তাদের ঘিরে ফেলে। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সূত্র জানায়, নগরীর নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের ওই ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় মুন্না নামে এক তরুণের। মুন্নার মাধ্যমে ওই  মেয়ের কাছে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা রায়হান উদ্দিন ও রাকিব উদ্দিন।
মুন্নার বন্ধু হিসেবে রায়হান ও রাকিবকে ফ্রেন্ড করে নেয় মেয়েটি। কিছুদিন পর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় নগরীর প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরমান উদ্দিন। এই সময় শহরে তারা গোপন মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়, কলেজ পড়ুয়া মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করবে। চারজন মিলে পরামর্শ করে ওই মেয়েটির ছবির সঙ্গে আপত্তিকর ছবি জুড়ে দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ ফেলবে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু নগ্ন ছবিও তৈরি করে তারা। এসব ছবির কয়েকটি মেয়েটির মেইল ও ফেসবুকে পাঠিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করে। এতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে তার পরিবার। চক্ষুলজ্জার ভয়ে তারা আপসের সিদ্ধান্ত নেন। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানালে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারক চক্রটিকে ধরতে মাঠে নামে। বুধবার বিকালে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নেয়। রাকিব ও ফরমান টাকা তুলতে আসে। এক পর্যায়ে টাকা তুলে বের হলে, দুই লাখ টাকা ও অস্ত্রসহ হাতেনাতে তাদের আটক করে। চক্রের বাকি দুই সদস্যের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে খুলশী থানা সূত্রে জানা যায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া রাকিব উদ্দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ০৯-১০ সেশনের ছাত্র। চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও বগি ভিত্তিক সংগঠন সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী। ক্যাম্পাস সংলগ্ন হাটহাজারী থানা ফতেপুর ইউনিয়নের মদনহাট এলাকায় রাকিবের বাড়ি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা মানবজমিনকে বলেন, যতটুকু নিশ্চিত হয়েছি সে নগরীর নাসিরাবাদ মহিলা কলেজের ছাত্রী। এই ব্যাপারে অভিযুক্ত আরও দু’জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। মেয়েটির পরিবার লজ্জায় ঘটনাটি চেপে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু বাধ্য হয়ে থানায় এসে আমাদেরকে জানান।

No comments

Powered by Blogger.