স্মরণ-মাহবুবুল আলম চৌধুরী একুশের প্রথম কবি by তামান্না ইসলাম অলি

একুশের প্রথম কবিতা 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি'-এর কবি তিনি। ছিলেন একজন ভাষাসৈনিক। করেছেন পত্রিকার সম্পাদনার কাজও। দেশের যেকোনো আন্দোলনে ছিল তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ। একজন সাংস্কৃতিক উদ্যোক্তা ও সংগঠকও ছিলেন। তিনি মাহবুবুল আলম চৌধুরী।
আজ ২৩ ডিসেম্বর। ৮০ বছর বয়সে ২০০৭ সালের এই দিনে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে ১৯২৭ সালের ৭ নভেম্বর জন্ম নেন। বাবা আহমদুর রহমান চৌধুরী এবং মা রওশন আরা বেগম। মাহবুবুল আলম চৌধুরী ১৯৪৭ সালে গহিরা হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে পাস করেন। এরপর ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে লেখাপড়া শেষ না করেই কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন। চট্টগ্রাম ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে যোগদান এবং ভারত ছাড় আন্দোলনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন। ১৯৪৫ সালে ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালে সম্পাদনা করেন মাসিক পত্রিকা 'সীমান্ত'। দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখকরা এখানে লিখতেন। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এটি নিয়মিত ছাপা হতো। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে সম্পাদনা করেন দৈনিক 'স্বাধীনতা'। এটি ছাপা হয়েছে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত।
মাহবুবুল আলম চৌধুরী কলকাতা দেশবন্ধু পার্কে শান্তি সম্মেলনে যোগ দেন ১৯৪৯ সালে। এরপর শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম প্রাদেশিক ভাষা আন্দোলন কমিটির সদস্য। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের খবর শুনে তিনি একুশের প্রথম কবিতা 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' লেখেন। সে সময় গোপনে এ কবিতা পুস্তিকা আকারে ছাপা হয়। এক রাতের মধ্যে ১৫ হাজার কপি ছাপিয়ে তা বিতরণের কাজ শেষ করা হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানে সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভায় কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। কবিতাটি শুনে 'চল চল ঢাকা চল, খুনি লীগ শাহীর পতন চাই' বলে উপস্থিত জনতা স্লোগান দিতে থাকে। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে। ১৯৫৩ সালে গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। যুক্তফ্রন্টে কাজ করেন ১৯৫৪-তে। এ ছাড়া স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
১৯৮৬ সালের জানুয়ারি মাসে মাহবুবুল আলম চৌধুরীকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমী। ১৯৯০-এর ফেব্রুয়ারিতে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী সংবর্ধনা দেয় তাঁকে। ১৯৯৭-এ চট্টগ্রামের অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম সংগীত পরিষদ, ২০০০ সালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, ২০০১ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ২০০২ সালে পদাতিক নাট্য সংসদও তাঁকে সংবর্ধনা দেয়। ২০০৫ সালের ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও পদক দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে পান মুক্তিযুদ্ধ জাতীয় পুরস্কার, ২০০৬ সালে পান ঋষিজ পদক। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.