দিল্লিতে গণধর্ষণ-বিক্ষোভে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান-'আগুনে ঘি ঢালছে পুলিশ'

নয়াদিল্লিতে বাসে ছাত্রী গণধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গতকাল শনিবার কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুড়েছে পুলিশ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে টানা ছয় দিনের মতো বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নামে।
তারা রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে পুলিশসহ অন্তত ১০ জন আহত এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মুখপাত্র মুখতার আব্বাস নাকভি বলেন, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, লাঠিপেটা করে পুলিশ আগুনে ঘি ঢালছে। এই বিক্ষোভ নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে, সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে। সরকার ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
গত সপ্তাহে চলন্ত বাসে ছয় মদ্যপের হাতে ধর্ষণের শিকার হন ফিজিওথেরাপির ২৩ বছরের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রী ও তাঁর বন্ধুকে দুর্বৃত্তরা রড দিয়ে পেটায়। পরে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। পুলিশ এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই তরুণীর শারীরিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। একটু একটু করে মুখে তরল খাবার খেতে পারছেন তিনি।
দোষীদের কঠোর শাস্তি এবং পথে-ঘাটে নারীর নিরাপত্তার দাবিতে গতকাল দিল্লিসহ বেঙ্গালুরু, মুম্বাই ও পুনেতে বিক্ষোভ হয়। তবে গতকাল সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় দিল্লিতে। বিক্ষোভকারীরা 'বিচার চাই', 'ধর্ষকদের ফাঁসি চাই' বলে স্লোগান দেয়। তারা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করলে দাঙ্গা পুলিশকে ডাকা হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের একাংশ পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে। পুলিশ এদের হটাতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীরাও ইটবৃষ্টি করে এর পাল্টা জবাব দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ। বিক্ষোভ এলাকা খণ্ড যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল।
এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিং সহিংসতা থেকে দূরে থাকার জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এবার শিকার তিন বছরের শিশু : বাসের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে নয়াদিল্লিতেই এবার ধর্ষণের শিকার হয়েছে তিন বছরের এক শিশু। ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার পশ্চিম দিল্লির সাগরপুরা এলাকার একটি বিদ্যালয়ে। সংবাদমাধ্যম জানায়, ধর্ষণকারী বিদ্যালয়ের মালিকের স্বামী। শিশুটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে নজরদারি সংস্থা দিল্লি কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ডস রাইটের (ডিসিপিসিআর) চেয়ারম্যানকে অতিসত্বর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়কমন্ত্রী কিরন ওয়ালিয়া। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্কুলটিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। সূত্র : পিটিআই, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.