তরিকুল ইসলাম বললেন-পরস্পরের প্রতি দুই নেত্রীর শ্রদ্ধাবোধ জরুরি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেছেন, দুই নেত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রয়োজন। শেখ হাসিনার প্রতি খালেদা জিয়ার এবং একইভাবে খালেদা জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার শ্রদ্ধাবোধ থাকলে দেশের রাজনীতি এতটা কলুষিত হতো না।
তিনি বলেন, যশোরে প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে যে কুৎসিত ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, তা দেশের জন্য লজ্জাকর। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি এমন ভাষায় কথা বলেন, তাহলে নতুন প্রজন্ম কী শিখবে? রাজনীতিকদের প্রতি কি তাদের শ্রদ্ধা থাকবে? প্রধানমন্ত্রীকে এরকম বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
গতকাল শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ন্যাশনালিস্ট এক্স স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রিজভী আহমেদ এবং ১৯৮৪ সালের ২২ ডিসেম্বর' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরা বলেন, তাঁরা নাকি জনপ্রিয়। তাই যদি হয়, তাহলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আপনাদের ভয় কেন। এত জনপ্রিয় হয়ে থাকলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দয়া করে দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবেন না।'
সমাজ পরিবর্তনে আদর্শবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, 'খাঁটি রাজনীতিক না হলে সমাজ কিভাবে পরিবর্তিত হবে? রাশেদ খান মেনন সারাজীবন আমাদের আদর্শের সংগ্রাম শিখিয়েছেন। তিনি আজ নৌকায় উঠে সংসদ সদস্য হয়েছেন, আদর্শ বিকিয়ে দিয়েছেন। হাসানুল হক ইনু আজীবন বৈজ্ঞানিক সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা ছিলেন, এখন পুঁজিবাদের সমর্থক। সাম্যবাদী দলের নেতা দীলিপ বড়ুয়া আজ ছয়টি ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক হয়েছেন। শ্রমিক নেতাদের অনেকে প্যারাডো গাড়িতে চড়েন। এই যদি রাজনীতিক ও শ্রমিক নেতাদের চরিত্র হয়, তাহলে আদর্শ কোথায় পাওয়া যাবে!'
সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা খায়রুল কবীর খোকন, শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা মোজাম্মেল কবির, শাহিন শওকত, নিশতাক আহমেদ রাকিব, শামীম আল রাজী প্রমুখ।
এদিকে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পেশাজীবী পরিষদ, জিয়া পরিষদ, মহানগর বিএনপি ও রংপুর বিএনপির উদ্যোগে চারটি আলাদা মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পেশাজীবী পরিষদের মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মাজেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের নেতা অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী ও মহাসচিব শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের আহ্বায়ক আ ন হ আখতার হোসেন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।
জিয়া পরিষদের মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, 'আপনাদের দাবি- পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি। তাহলে আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে দুদক সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করল কেন? বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জিয়া পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি ডা. শফিকুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। সংগঠনের সভাপতি কবির মুরাদের সভাপতিত্বে এতে আরো বক্তব্য দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু প্রমুখ।
মির্জা ফখরুলসহ নেতাদের মুক্তি দাবি : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সূত্রাপুর থানা বিএনপির সভাপতি কাজী আবুল বাশারসহ নেতাদের মুক্তির দাবিতে মহানগর বিএনপি এবং রংপুর বিভাগ বিএনপির উদ্যোগে দুটি মানববন্ধন হয় গতকাল। মহানগর বিএনপির মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এক-এগারোতে অনেক চেষ্টা হয়েছে খালেদা জিয়াকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার, কিন্তু তা সফল হয়নি। বরং তাঁর কারণেই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসতে পেরেছিলেন। মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, মহানগর সদস্যসচিব আবদুস সালাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.