রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা-দায়িত্বহীনতার পরিণতি

বিপদ একা আসে না'_ এ প্রবাদটিই যেন সত্যি হয়ে এলো রিপন খন্দকারের পরিবারে। রিপন খন্দকার গ্রেফতার হয়েছেন ১০ ডিসেম্বর, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে। পুলিশের অভিযোগ, রিপন বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন।
রিপনের আত্মীয়-স্বজনরা বলছেন, রিপন আগে জুট মিলে চাকরি করতেন, এখন একটি রেস্তোরাঁয় ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি নিয়মিত বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আড্ডা দিতেন, আর সেখান থেকে সন্দেহবশত পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে। রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য কি মিথ্যা, সেটি হয়তো আদালতেই নির্ধারিত হবে। কিন্তু রিপনের পরিবারে যে দুর্ভাগ্য নেমে এসেছে তার তুলনা নেই। তার স্ত্রী রত্না দুই সন্তান নিয়ে কারাগারে দেখতে যাচ্ছিলেন রিপনকে। পথিমধ্যে ট্রেনের সঙ্গে প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার সংঘর্ষে রিকশায় থাকা রত্না নিহত হন। দুই শিশু সন্তান আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শিশু দুটি আশঙ্কামুক্ত হলেও এখন কার্যত অভিভাবকহীন। আসামি বাবা কারাগারে, তার ভাগ্যে কী আছে জানা নেই। আর মা-হারা সন্তানদের মধ্যে বড় রিফাত সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র, ছোট রশ্মি নার্সারিতে পড়ে। বাবা-মাকে ছাড়া শিশু দুটি অকূল সাগরে পড়েছে। আত্মীয়-স্বজনরা নিশ্চয় তাদের দেখভালের ব্যবস্থা করবেন, কিন্তু তাতে কি মাকে হারানোর বেদনা কমবে? এভাবে কাটবে না বাবার অনুপস্থিতির বেদনাও। মানবিক দিক বিবেচনা করে রিপনের জামিন দেওয়া যায় কি-না, তা নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাববেন। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার বিষয়েও ভাবতে হবে। রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি নতুন নয়। রাজধানীর রেলক্রসিংগুলোতে নিয়মিতভাবে পথচারী ও নানা যানবাহনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এ ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি বদলানো দরকার। এ ক্ষেত্রে ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের গাফিলতিকেও আমলে নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, ট্রেন এসে পড়লেও যথাসময়ে ক্রসিং বার নামানো হচ্ছে না গেটম্যানদের অবহেলার কারণে। আবার কখনও কখনও ট্রেন আসতে দেরি থাকলেও গেটম্যানরা আগেই নামিয়ে বসে থাকেন। এতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে যথাসময়ে যথাদায়িত্বের কথা মাথায় রাখতে হবে। আর পথচারী ও যানবাহনের আরোহীদের সতর্কতার সঙ্গে পথ চলতে হবে। সামান্য সময় বাঁচানোর জন্য মূল্যবান প্রাণের অপচয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সবার সচেতনতা ও সহযোগিতায় দুর্ঘটনা রোধ হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.