সেই কুমিরের গল্প by আবদুল হাই শিকদার

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গল্পটা আসলে কুমিরের রচনার মতো। যখনই রচনা লিখতে বলা হয়, তখনই ছাত্রটি কুমির নিয়ে রচনা লেখে : কুমির উভচর প্রাণী। ইহার চারটি পা। ধারালো দাঁত। আর লম্বা লেজ আছে।
লেজের উপরিভাগ খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, খাঁজকাটা। বছরের মাঝামাঝি শিক্ষক বিষয়টি লক্ষ্য করে পরের পরীক্ষায় বিষয় ঠিক করে দিলেন ‘আমাদের স্কুল’। ছাত্র লিখল : আমাদের স্কুলটি খুবই সুন্দর। ছাত্র-শিক্ষক সবাই মন দিয়ে পড়ে ও পড়ায়। তবে স্কুল কখনোই নদীর তীরে বানানো ঠিক নয়। কারণ ছেলেরা হঠাত্ নদীতে পড়ে গেলে সর্বনাশ হবে। কারণ নদীতে কুমির আছে। কুমির একটি উভচর প্রাণী। ইহার চারটি পা আছে। দাঁতগুলো ধারালো। আর লম্বা লেজ আছে। লেজের উপরিভাগ খাঁজকাটা খাঁজকাটা... খাঁজকাটা। রচনা পড়ে শিক্ষক দেখলেন আবার সেই কুমির চলে এসেছে। এর পরের পরীক্ষায় বিষয় দিলেন পাট। ছাত্র লিখল : পাটকে সোনালি আঁশ বলা হয়। ইহা অর্থকরী ফসল। তবে পাট কাটার পর কখনোই নদীতে জাগ দিতে হয় না। কারণ নদীতে কুমির আছে। কুমির একটি উভচর প্রাণী... খাঁজকাটা, খাঁজকাটা, খাঁজকাটা। রচনা পাঠ করে শিক্ষকের তো মেজাজ গরম। পাজি ছাত্রকে শায়েস্তা করার জন্য পরবর্তী পরীক্ষায় পলাশীর যুদ্ধের ওপর রচনা লিখতে বললেন। শিক্ষক মুখ টিপে হাসলেন। দেখি বাছাধন এবার কী করে। ছাত্র লিখল : ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজদৌলার সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে বিরাট বাহিনী নিয়েও নবাব সিরাজদৌলা পরাজিত হন। তার পরাজয়ের প্রধান কারণ, তিনি খাল কেটে মীর জাফরের মতো কুমিরকে প্রধান সেনাপতি বানিয়েছিলেন। এই কুমির একটি উভচর প্রাণী... ইত্যাদি। রচনা পাঠ করে শিক্ষক হতাশ হয়ে হাত-পা ছেড়ে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লেন।
আওয়ামী লীগও প্রাকৃতিক কারণেই বোধকরি সেই ছাত্রটির মতো। মুখে যত মিষ্টি কথাই বিতরণ করুক না কেন— কিন্তু তাদের গল্পটা শেষ পর্যন্ত কুমিরের কাছে যাবেই। মরহুম শেখ মুজিব নিঃসন্দেহে এক বিশাল ব্যক্তিত্ব, আমাদের একজন মহান জাতীয় নেতা। তার ‘নাম’ ব্যবহার করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু পোহাইলে শর্বরী দেখা গেল বাংলাদেশ যথা পূর্বং তথাই পরং—পর্বে হাবুডুবু খাচ্ছে। সারাজীবন যে শেখ মুজিব গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, ক্ষমতায় বসেই সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে চালু করলেন একদলীয় বাকশালী স্বৈরশাসন। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে বেছে নিলেন ভয়ানক দমন-পীড়নের পথ। চারটি বাদে সব কাগজ বন্ধ করে দিলেন। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নানাভাবে হত্যা করা হলো। প্রশাসক মুজিবের চরম ব্যর্থতার পথ দিয়ে মাথাচাড়া দিল লুণ্ঠন, দখল, ব্যাংক ডাকাতি, ধর্ষণ, গুম, খুন, রাহাজানি। অচিরেই কুফল ফলল। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগারদের সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের অনাহারে মারা গেলে ১০ লাখ আদম সন্তান। বাংলাদেশ উপাধি পেল এশিয়ার পর্ণকুঠির—তলাবিহীন ঝুড়ি।
আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে মাথায় হেজাব হাতে তসবি নিয়ে আগের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে বললেন, আওয়ামী লীগকে একটিবার শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিন। আমরা শিল্পায়ন করব। বেকারত্ব দূর করব। শিক্ষার হার বাড়াব, ফারাক্কায় পানি আনব। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর যে আওয়ামী লীগকে আমরা পেলাম—এ হলো সেই আওয়ামী লীগ—যাদের সুস্থ করতে খান আতাউর রহমান ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ছবিটি বানিয়েছিলেন। স্বয়ং শেখ মুজিব যে দলকে চাটার দল, চোরের খনি বলে হাহাকার করেছিলেন। খাসলতের সামান্যতম বদলও হয়নি। ফলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলো।
অস্থির, অসহিষ্ণু, উদ্ধত, ক্রুদ্ধ এবং বেপরোয়া রাজনীতির ফল ফলল দ্রুতই। মানুষ হলো বারো টুকরোয় খণ্ডিত। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বললেন, একটি লাশের বদলে ১০টি লাশ চাই। সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিতে বাধ্য হলেন। তৈরি হলো ভয়ঙ্কর গডফাদারতন্ত্র। বেদনার্ত কবিকণ্ঠে মাতৃভূমির জন্য ধ্বনিত হলো :
‘আর অকস্মাত্ তুমি নিক্ষিপ্ত হয়েছো গনগনে চুল্লির মধ্যে।
তুমি পতিত হয়েছো হৃদয়হীন বিভীষিকাময় দোজখে।
তুমি নিক্ষিপ্ত হয়েছো গলিত বিষ্ঠার এক ভয়াবহ দরিয়ায়।
তোমার বাকরুদ্ধ দৃষ্টির সামনে তোমারই হিংস্র নখ
ছিন্নভিন্ন করছে তোমারই হৃিপণ্ড।
তোমাকে ঘিরে তোমার পোড়া মাংসের বীভত্স অন্ধকার।
শকুনি গৃধিনীর পাশবিক উল্লাস।’
তার সময়কার শাসন ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে রইল ‘আওয়ামী জাহেলিয়াত’ নামে।
এবারও তিনি নতুন স্লোগানকে ‘সার’ করেছেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়বেন। ভিশন ২০২১। ক্ষমতায় এসেছেন ৫ বছরের জন্য; কিন্তু পরিকল্পনা ২০২১ সাল পর্যন্ত। গোপন অভিলাষ কী আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু ১০ টাকার চাল, ঘরে ঘরে চাকরি, বিনামূল্যে সার প্রদানের অঙ্গীকার শিকেয় তুললেন। দ্রব্যমূল্য ক্রমবর্ধমান, সন্ত্রাস, বিদ্যুত্ সমস্যা, পানি, গ্যাস, শিল্পায়ন—সব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বাদ দিলে মামলা ও হামলার বন্যা বইয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলের ওপর। মইন উ এবং ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকারের চেয়েও বেশি ক্রুদ্ধতা নিয়ে মিডিয়াকে ঠেসে ধরেছেন। কথা বললেই এখন মামলা। দিগম্বর করার হুমকি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াকে সইতে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি আঘাত। যেন জিয়ার ম্যুরাল ভাঙলে, বিমানবন্দরের নাম পাল্টালেই বদলে যাবে দিন। পাগলামি আর কাকে বলে!
দুই.
বাংলা সাহিত্যে ঢাকার নাম প্রথম পাওয়া যায় ষোড়শ শতাব্দীতে। কবি আবদুল হাকিমের ‘নূরনামা’ কাব্যে। কবি লেখেন :
‘সপ্ত পঞ্চজন এক শয়নেতে ঠাম
স্বপনেতে কেহ ঢাকা কেহ চাটিগ্রাম।’
পাঁচ সাতজন একসঙ্গে ঘুমায়। স্বপনে কেহ যায় ঢাকা, কেহ যায় চট্টগ্রাম। আবদুল হাকিমের নাম বেশি বিখ্যাত ‘যেজন বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গ বাণী’—চরণগুলোর জন্য। আবদুল হাকিমের আগে আর কোনো কবি ‘ঢাকা’ শব্দটি বা স্থানটি বা শহরটির নাম কাব্যে ব্যবহার করেননি। এ বিচারে আবদুল হাকিমের প্রতি ঢাকাবাসীর বিশেষ কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত। যদিও সে দ্রব্যটির আলামত দেখিনি কোথাও।
সেই ঢাকা এখন আরেকটি গণবিস্ফোরণের মুখোমুখি। অবশ্য ঢাকা আগাগোড়াই মিছিল মিটিং আন্দোলন আর গণঅভ্যুত্থানের শহর। এই ঢাকার কবিই শেখ মুজিবের শাসনামল সম্পর্কে লিখেছিলেন :
‘ধরা যাবে না ছোঁয়া যাবে না
বলা যাবে না কথা
রক্ত দিয়ে পেলাম শালার
এমন স্বাধীনতা!
... ... ...
বাঁচতে চেয়ে খুন হয়েছি
বুলেট শুধু খেলাম
উঠতে এবং বসতে ঠুকি
দাদার পায়ে সেলাম।’
ঢাকা বঙ্গভঙ্গের গনগনে স্মৃতির শহর। ঢাকা মহান ভাষা আন্দোলনের শহর। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের শহর। ঢাকা অবিস্মরণীয় মুক্তিযুদ্ধের শহর।
আজ ইট কাঠ রড লোহা, কোলাহল, ধোঁয়া, ধুলা, যানজট আর খেয়োখেয়িতে যতই কাহিল হোক—ঢাকা যে যে কোনো মুহূর্তে গাঝাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে—তার আলামত চারদিকে ফুটে উঠছে। যানজটে নাকাল শহরবাসী বাসায় ফিরে দেখে বিদ্যুত্ নেই। গরমে ঘর্মাক্ত ক্লান্ত হয়ে বাথরুমে গিয়ে দেখে পানি নেই। ক্ষুধায় কাতর হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে গ্যাস নেই। নেই নেই আর নেই—এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সন্ত্রাস। শত শত খুনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। হচ্ছে খুন। বাড়ছে ধর্ষণ। ভর্তিবাণিজ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। টাকা নিয়ে যেতে হচ্ছে ব্যাগভরে। আর বাজার খরচ আসছে পকেটভরে।
সব মিলিয়ে বিস্ফোরণের আগে আগ্নেয়গিরির ভেতরে যা যা হয়, সেসব নিয়ে ফুঁসছে মানুষ। আসল কাজ বাদ দিয়ে ফালতু কাজে সরকারের লমম্ফঝম্প দেখে ত্যক্তবিরক্ত মানুষ। ‘আর যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন, কেষ্টো বেটাই চোর’ থিওরি । আর কোনো কাজে আসছে বলে মনে হচ্ছে না।
ফলে অসহনীয় পানি সঙ্কট নিরসনে সরকার ব্যর্থ হলে রাজধানীবাসীর ক্ষোভ গণবিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। এ আশঙ্কা কোনো যদুমধুর নয়। এ আশঙ্কার নায়কদের সবাই সরকারদলীয় এমপি।
যদি সরকারি দলের এমপিদের আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়, তাহলে বলাবাহুল্য সেই বিস্ফোরণ মোকাবিলা করার ক্ষমতা সরকারের নাও থাকতে পারে। কোনো আশ্বাসেই যে চিড়ে আর ভিজবে না—সে কথাও হলফ করে বলা যায়। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি, গোলাপি, কমলা—নানা ধরনের আশ্বাস দেশের মানুষ পেয়ে এসেছে। শুনে এসেছে অ্যানালগ, ডিজিটাল, কটন, সিনথেটিক ফাইবারে বোনা নানা স্বপ্নের কাহিনী। কোনোটাতেই কোনো কাজ হয়নি। মানুষ চায় কাজ এবং কাজের বাস্তবায়ন। তখতে বসে প্রতিহিংসাবশত প্রতিশোধের রাজনীতিও যেমন কেউ প্রত্যাশা করে না, তেমনি আবেগ নিয়ে নিরন্তর বাণিজ্যও দেখতে দেখতে জীবন পচে যাওয়ার উপক্রম।
অতএব সময় থাকতে হও না হুশিয়ার। সমস্যা সমাধান করুন। সমস্যা নিয়ে উতোর চাপানো বাদ দিয়ে ফলদায়ক কর্ম করে ইতিবাচক মানুষের মতো এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন।
তিন
মন্ত্রী বলে কথা, তিনি সাধারণ কেউ নন—সুপারম্যানের কাছাকাছি কেউ। যা খুশি তা-ই বলার একধরনের অধিকার তো তাদের আছেই। কে কী করে? সাধারণ কেউ বললে অবশ্য সঙ্গে সঙ্গে মামলা, নইলে রাস্তাঘাটে ‘দিগম্বর’ করার জংলী ঘোষণা। মন্ত্রীদের দিকে তো আঙুল তুলে কথা বলা যায় না। সেজন্যই যত দিন যাচ্ছে, মন্ত্রীদের বক্তৃতা-বিবৃতির খণ্ডাংশ যা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়—সেসব পড়ে আমাদের তো আক্কেল গুড়ুম। যাচ্ছি কোথায় আমরা?
মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক সাহেবের মহা মহা আবিষ্কার— মাদ্রাসাগুলো জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র।—এই বক্তৃতার পর অণুবীক্ষণ, দূরবীক্ষণ, ব্যারোমিটার, থার্মোমিটার সব কাঁধে ঝুলিয়ে অতি উত্সাহীদের কেউ কেউ মাঠে নেমে শেষে হতাশ হয়ে ফিরেছেন বাড়ি। তাদের বক্তব্য হলো, করমজলে আছে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে, সাভারে আছে গো প্রজনন কেন্দ্র। ছাগল প্রজনন কেন্দ্রও আছে দেশে। কিন্তু জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্রও আছে জানতাম না বলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমরা দেখলাম— মাদ্রাসাগুলোর বেশিরভাগেই পড়াশোনা করে গরিব মানুষের ছেলেমেয়ে। নিরক্ষরতা দূরীকরণে এরা রাখছে তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা। নৈতিক শিক্ষার বিস্তারে এদের ভূমিকা অনেক। কিন্তু কোথাও কোনো মাদ্রাসায় নারী-পুরুষদের ঘরে আটকিয়ে কিংবা তাদের যৌনকর্মের ব্যবস্থা করে দিয়ে, বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জঙ্গি উত্পাদনের ন্যূনতম কোনো আয়োজনও চোখে পড়েনি। তাছাড়া মাদ্রাসাগুলোতে কো-এডুকেশনও নেই। ফলে মানবভ্রূণ মাদ্রাসার হুজুরদের তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছে এটা একেবারেই অমূলক চিন্তা। জঙ্গি হলেও ওরা যেহেতু মানুষ, সেজন্য মানুষের জন্য আমাদের দেশে আলাদা প্রজনন কেন্দ্র লাগে না। প্রতিটি ঘরই এ কাজে নিয়োজিত আছে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সুদর্শন মন্ত্রী। একবার বললেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী অমানুষ; আরেকবার বললেন, বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী দল। বিএনপির পক্ষে সাফাই গাইবার জন্য এ রচনা নয়। আমরা কোরআন, বাইবেল, গীতা, ত্রিপিটক মাথায় নিয়ে বলতে পারি, পৃথিবীর সুস্থ সব মানুষকে একত্রিত করলেও তারা বলবে—অবশ্যই বিরোধীদলীয় নেত্রী মানুষ। তাহলে এই যে একটি শিষ্টাচারবর্জিত আবিষ্কার সৈয়দ আশরাফ করলেন, এর কারণ কী? তার কি চোখ বা মাথার কোনো সমস্যা আছে? যদি না থাকে তাহলে বলতে হবে, তারপরও জলজ্যান্ত একজন মানুষ যে তার কাছে অমানুষ মনে হচ্ছে—এর কারণ বিরোধীদলীয় নেত্রীকে যদি আয়না ধরি, তাহলে বলতে হবে সৈয়দ আশরাফ নিজের চেহারাই দেখেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী প্রশ্নেও একই কথা— ‘ইঞ্জিনিয়ার বেয়াইকে’ পাশে বসিয়ে এরকম কথা সরকারি কর্তাদের মুখে মানায় না।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কয়েকদিন আগে রণহুঙ্কার দিয়েছেন, পত্রিকা আর স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর মালিকরা নাকি...।
ডট ডট ডট দিলাম। কারণ লিখতে রুচিতে বাধে। খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপিকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের উক্তি শুনতে শুনতে বাক্যহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। হতবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এর মধ্যে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাদের হম্বিতম্বিও আছে। ইনু সাহেব বলেছেন, জয়ের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তাদের সেটা প্রমাণ করতে হবে—প্রমাণে ব্যর্থ হলে পরিণতি হবে ভয়ানক।
সাজেদা চৌধুরীও বসে নেই। তিনি আমার দেশ সম্পাদককে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ঘর থেকে বের হতে দেয়া হবে না।
রাশেদ খান মেননের মতো মানুষের হাতে ধ্বংসের মুখে এখন ভিকারুননিসা নূন স্কুল। ভর্তিবাণিজ্যে তিনি নাকি জাতীয় রেকর্ড করতে যাচ্ছেন। আমি অবশ্য তার জন্য দুঃখ পাই। মাছের পচন নাকি ধরে মাথা থেকে—তার হয়তো তা-ই হয়েছে।
চার
আগে শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা নিয়ে কথা বললে হুমকি-ধমকি দেয়া হতো। এবার ক্ষমতায় আসার পর নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই মাত্রার নাম মামলা। এখন এই মামলার পরিধিও বিস্তৃত অনেক। ‘জয়’ অর্থাত্ সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে কথা বললেই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন কর্তারা। এখানেই শেষ নয়—মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এমনকি সামান্য সাধারণ কোনো আওয়ামী নেতার বিরুদ্ধে কথা বললেও মামলা হয়। এ মামলা আবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা করেন না। করেন সংক্ষুব্ধ হয়ে অন্য কেউ—মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের চেলাচামুণ্ডারা। করেন যা তার বেশিরভাগই আবার মানহানির মামলা। আবার সরকারি দল ছাড়া অন্য কাউকে আক্রমণ করলে সে ব্যাপারে অন্য কেউ সংক্ষুব্ধ হলেও আদালত মামলা নেন না। এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীকে যারা বিষ খাইয়ে মারতে চেয়েছিল—তাদের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ হয়ে যখন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মামলা করতে গেলেন— আদালত সেটা গ্রহণ করেননি।
জয়কে আক্রমণ নয়, সামান্য অভিযোগ ছাপা হওয়া যে কত বড় ‘কবিরা গুনাহ’, সেটা তো অন্যদের জানার কথা নয়। এজন্যই এই ঘটনায় আমার দেশ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২৯টি, যা একটি বিশ্বরেকর্ড।
প্রতিমন্ত্রী কামরুল সাহেবকে ‘বটতলার উকিল’ বলে মহা অন্যায় করেছেন ধরে নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ অনুসারীরা দু-দুটি মামলা করেছে। বটতলা আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বটতলার কথা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতেও আছে। বটগাছ ছায়া দেয়। চিত্তকে শান্ত করে। এর নিচে মেলা বসে। আরও কত কী! সেই বটতলার উকিল বলা কীভাবে অন্যায় হয়? তবে তাকে যদি বলা হতো, শ্যাওড়া গাছতলার উকিল, ভেন্না গাছতলা কিংবা গাব গাছতলার উকিল—তাহলেও একটা কথা ছিল!
পাঁচ
সরকারি কর্মকাণ্ডের তুলনায় বিরোধী দলের হম্বিতম্বি দেখে অবাক লাগে। জিয়া বিমানবন্দরের নাম পাল্টানোর পর তারা সামান্য একটা অবস্থান ধর্মঘটও দিতে পারেনি। উল্টো সরকারি দমন-পীড়নের বিপরীতে এমন ভাব করছে, তাতে মনে হচ্ছে, আমাদের উসকানি দেয়া হচ্ছে—কিন্তু যতই উসকানি দাও, আমরা নড়ছি না। আবার এমন ধরনের কথা বলছেন, যা সেই সাইকেল হারানো লোকটির কথাই মনে করিয়ে দেয়।
এক ভদ্রলোক বাইরে সাইকেল রেখে দোকানের ভেতরে ঢুকেছেন চা খেতে। কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন সাইকেল নেই। তিনি চিত্কার-চেঁচামেচি শুরু করলেন। বললেন, আমাকে এক্ষুনি সাইকেল এনে দাও, নইলে আমি চট্টগ্রামের মতো অবস্থা করে ছাড়ব। একথা তিনি উচ্চকণ্ঠে বারবার বলতে লাগলেন। লোকজন জড়ো হয়ে গেল। কেউ কেউ ভয়ও পেল। এর মধ্যে এক ছেলে তার হারানো সাইকেল ফেরত দিল। আসলে ছেলেটি সাইকেলটা নিয়ে রাস্তায় মজা করে চালাচ্ছিল। যা হোক, ভদ্রলোক খুব খুশি হয়ে সাইকেল নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলেন। উপস্থিত লোকজন বলল, আপনি চলে যাচ্ছেন। কিন্তু একটা কথা, চট্টগ্রামে আপনি কী করেছিলেন? ভদ্রলোক নির্বিকারভাবে বললেন, ভাই, চট্টগ্রামে একবার এভাবে সাইকেল হারিয়েছিলাম। তারপর অনেক চিত্কার, হুমকি-ধমকি দিলাম। কোনো কাজ হলো না। শেষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।
লোকেরা সমস্বরে বলল, ‘আচ্ছা!’
এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে—নইলে নাই রে পরিত্রাণ। কারণ মনে রাখতে হবে, এ সরকার আসলে হলো মেষের চামড়া গায়ে জড়ানো নেকড়ে। একে বিশ্বাস করাও যায় �

No comments

Powered by Blogger.