১৪ দলের গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে বক্তারা- আগামী বছরই সম্পন্ন হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার

আগামী বছরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে। বিরোধী দল যতই ষড়যন্ত্র করুক তা রুখতে পারবে না। কারণ, এই বিচার করার জন্য জনগণ সরকারকে রায় দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সব বাধা ও ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত রাজপথে থাকবে ১৪ দল।
গতকাল শনিবার গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশে ১৪ দলের নেতারা এ কথা বলেন।
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে’ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এই গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে।
একই দাবিতে আগামী ৭ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীন এই জোটটি। গতকাল সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির মানববন্ধন থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গণমিছিল-পূর্ব সমাবেশের জন্য বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে দুটি ট্রাকের ওপর একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। সমাবেশ শেষে বিশাল গণমিছিলটি জিরো পয়েন্ট, পুরানা পল্টন, প্রেসক্লাব, হাইকোর্টের মোড়, মৎস্য ভবন হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে ১৪ দলের নেতারা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখার শপথ নেন।
গতকাল দুপুর থেকেই গণমিছিল উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন, ১৪ দলের শরিক দলের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকারররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে জমায়েত হতে থাকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সাংসদদের অনুসারীরাও আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে আসে। এতে অংশ নেয় পেশাজীবী সংগঠনগুলোও। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাও মিছিলে অংশ নেন। ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকেও ট্রাক-বাস নিয়ে মিছিলে অংশ নেয় ১৪ দলের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেতা-কর্মীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। অনেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিসংবলিত পোস্টার-ব্যানার-প্ল্যাকার্ড বহন করেন। বেলা আড়াইটার আগেই বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশপাশের এলাকা ভরে যায়।
মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্যই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে। নতুবা বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়ার কথা ছিল।
আওয়ামী লীগের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবই। আপনারা সবাই একাত্তরের চেতনা নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলুন। ২৬ মার্চ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। টানা কর্মসূচি চলবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘জামায়াত অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করে। তারা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। নারীদেহ নিয়েও তারা ব্যবসা করে। ১৯৭১ সালে গোলাম আযম বাংলাদেশের নারীদের গণিমতের মাল বলে ফতোয়া দিয়ে হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। তাদের কাছে নারীদেহ আর গরুর মাংসের মধ্যে কোনো তফাত নেই। তাদের বিচার এই দেশের মাটিতে হবেই হবে।’
দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘১৪ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার চূড়ান্ত। ২০১৩ সালে তাদের ফাঁসি হবে। এটা কেউ রুখতে পারবে না।’ তিনি বিরোধী দলের উদ্দেশে বলেন, ‘’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে আপনারা বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে আমরা বিজয়ী হব। আগামী নির্বাচনেও আমরা জয়ী হব।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বিজয়ের মাসে সবাই যেখানে আনন্দ করবে, আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য মিছিল করতে হচ্ছে। তবে আমরা এই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত পিছপা হব না।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি শুধু জনগণের সঙ্গেই বেইমানি করেননি, তাঁর প্রয়াত স্বামী জিয়াউর রহমানের সঙ্গেও বেইমানি করেছেন।
সভায় আরও বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাসদের শরিফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুর রহমান, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণআজাদী লীগের আবদুস সামাদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
জাতীয় সঞ্চালন পরিষদের কর্মসূচি: মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ‘মহান বিজয় মাসের বিজয় শোভাযাত্রার’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও বক্তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেন।
এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, বিএনপি ও জামায়াত একত্র হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যত চেষ্টাই হোক তা বরদাশত করা হবে না ও তাঁদের দমন ও প্রতিহত করা হবে।
জাতীয় সঞ্চালন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিকার চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে দেশি ও অন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে থেকে আমরাও এ ষড়যন্ত্র রুখতে কাজ করব।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম ও জাতীয় সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রমুখ।
জাতীয় সঞ্চালন পরিষদের নামে এই শোভাযাত্রার আয়োজন করা হলেও এতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও বেসরকারি সংস্থা প্রশিকার চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহমেদের ছবিসহ ফেস্টুনের আধিক্য ছিল। আগত ব্যক্তিদের অনেকেই জানান, তাঁরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে প্রশিকায় চাকরি করেন।
শোভাযাত্রাটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়।

No comments

Powered by Blogger.