জন কেরিই পররাষ্ট্রমন্ত্রী- পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্তে ওবামার নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে!

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সিনেটর ৬৯ বছর বয়সী জন কেরিকেই বেছে নিলেন প্রেসিডেন্ট ওমাবা। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাট এই নেতার নাম ঘোষণা করেন তিনি।
ওবামার অনুগত বলে পরিচিত কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হোয়াইট হাউসে আরও কেন্দ্রীভূত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
কেরি মার্কিন সিনেটে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কিন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। তাঁর বাবাও ছিলেন সফল কূটনীতিক। সব মিলিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদের জন্য যেন সবচেয়ে সঠিক ব্যক্তিই কেরি।
তাই হোয়াইট হাউসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কেরির নাম ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘এক অর্থে, জন কেরি তাঁর পুরো জীবনটাই প্রস্তুত করেছেন এই পদটির জন্য।’ ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সিনেটর কেরির প্রশংসা করে ওবামা বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক বড় বড় প্রায় সব বিতর্কেই যুক্ত ছিলেন কেরি।’
বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে তুলনা করলে বৈদেশিক সম্পর্ক এবং এ নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে কেরির অভিজ্ঞতা বেশি হতে পারে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় মার্কিন বৈদেশিক নীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি হোয়াইট হাউসে আরও কেন্দ্রীভূত হলো। ওবামা তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে গত চার বছর পররাষ্ট্রনীতি শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক এবং আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে গুটিয়ে আনার মতো বিষয় শক্ত হাতেই সামলেছেন ওবামা।
ফরেন পলিসি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ডেভিড জে রডকফ বলেন, কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি হোয়াইট হাউসে কেন্দ্রীভূত হবে—এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে। কারণ, কেরি প্রেসিডেন্টের প্রতি আনুগত্য দেখাবেন ও সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।
কেরি এটা করতেই পারেন। কারণ, হিলারি ২০০৮ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনে প্রাথমিক বাছাইয়ে ওবামার সঙ্গে লড়াই করে হেরে যান। ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়ে হিলারিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন। আর কেরি শুরু থেকেই ওবামার বিশ্বস্ত ও অনুগত। ওবামার এ অবস্থানে আসার বিভিন্ন পর্যায়ে কেরি তাঁকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। ওবামা প্রেসিডেন্ট হয়ে কেরিকে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন দেন। গত চার বছরে কেরি পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সুদান ও রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন কূটনীতি ভালোই সামাল দেন।
কেরি ২০০৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রিপাবলিকান পার্টির জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে হেরে যান। বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ধরে রাখাকে তাঁর অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয়।
কেরি কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভারে জন্ম নেন। ১৯৬৬ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন তিনি। মার্কিন নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেন। রাজনীতিতে যোগ দেন ১৯৮২ সালে। ২০০৮ সালে টানা পঞ্চমবারের মতো ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন কেরি। নিউইয়র্ক টাইমস।

No comments

Powered by Blogger.