জমি নিয়েবিরোধ- পুলিশ প্রতিবেদন পেতে ভোগান্তি by মোহাম্মদ মোরশেদুর রহমান

রহিম সাহেব ও তাঁর ভাই দুবাই থাকেন। ২০০৭ সালে তাঁরা চট্টগ্রাম শহরে চার গন্ডা জায়গা কিনলেন। কেনার পর ২০০৮ সালে বিএস নামজারি খতিয়ানলিপি করে চারদিকে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে জায়গাটি ভোগদখল করে আসছিলেন।
ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় তাঁরা দেশে থাকতে না পারায় ২০১১ সালের চুক্তিপত্র মূল্যে তাঁরা ওই সম্পত্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করার জন্য ডেভেলপারকে দিয়ে দিলেন। এরপর শুরু হলো একের পর এক ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের। আরএস রেকর্ডি মালিকের ধারাবাহিকতায় বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ওই সম্পত্তি ওয়ারিশমূলে ভোগদখলে আছেন দাবি করে মামলা করতে থাকেন। বিড়ম্বনায় পড়ে যান রহিম সাহেব ও ডেভেলপার কোম্পানি।
প্রতিটি ১৪৫ ধারার মামলায় থানা থেকে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। ওই প্রতিবেদন আনতে গিয়ে মামলার প্রার্থী ও প্রতিপক্ষকে খরচান্ত হতে হচ্ছে। ১৪৫ ধারার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রার্থী ও প্রতিপক্ষকে থানায় ডাকে। অনেক সময় থানায় নির্ধারিত তারিখে বৈঠক হয় না। দিনের পর দিন ঘুরতে হয়।
থানায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয় পক্ষের দলিল ও খতিয়ান পর্যালোচনা করার চেষ্টা চলে। কিছু কিছু পুলিশ সদস্য যেহেতু খতিয়ান ও দলিলে উল্লিখিত আনা, গন্ডা, কড়া, ক্রান্তি ও তিলের হিসাব এবং খতিয়ানের হিস্যাংশের চিহ্নগুলো ভালোভাবে বোঝেন না, সে জন্য পক্ষদের যেকোনো একটি দুর্বলতা খুঁজে নিয়ে অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য আলাদাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। আবার মামলার পক্ষদের চালচলন ও বেশভূষায় আর্থিক সচ্ছলতার পরিমাপ করে চাপের ব্যারোমিটার ওঠানামা করে। অনেক থানায় এটি একটি রমরমা বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মূল উপাদান হচ্ছে স্থাবর সম্পত্তিতে দখলদারের দখল অব্যাহত রাখা। বাস্তবে দেখা যায়, কোনো সম্পত্তিতে কারও দখল আছে, কিন্তু দলিল কিংবা খতিয়ান নেই। আবার কখনো কখনো দেখা যায়, কারও কারও খতিয়ান ও দলিল আছে, কিন্তু দখল নেই। উপরিউক্ত ঘটনায় রহিম সাহেবের দলিল, খতিয়ান এবং দখল থাকা সত্ত্বেও তিনি সমস্যায় পড়েছেন। প্রতিপক্ষ ওই সম্পত্তিতে স্বত্ব দাবি করেন। অনেক বিচারপ্রার্থী মনে করেন, ১৪৫ ধারার মামলা করে স্বত্ব পাবেন কিংবা খতিয়ান সংশোধন করতে পারবেন। বাস্তবে ১৪৫ ধারার মামলার মাধ্যমে স্বত্ব দাবি করা যায় না। খতিয়ান সংশোধন করা যায় না, এবং দলিল জাল মর্মে ঘোষণা চাওয়া যায় না। পুলিশেরও স্বত্বের ধারাবাহিকতা দেখার সুযোগ নেই। পুলিশ শুধু দখলের বিষয়ে রিপোর্ট দিতে পারবে। মামলার প্রার্থী-প্রতিপক্ষ উভয় দিক থেকে আর্থিক লাভবান হয়ে পুলিশকে দায়সারা গোছের প্রতিবেদন দিতেও দেখা যায়। যেমন একপক্ষকে দখলে আছে বলে খুশি করে এবং অন্য পক্ষকে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা আছে বলে খুশি করতে দেখা যায়। এতে ১৪৫ ধারার মামলা নিষ্পত্তিতে অহেতুক বিলম্ব হচ্ছে। কোনো পৈতৃক সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে সরসে-নিরসে নিবন্ধিত অংশনামা না হলে পরবর্তী সময়ে ওই সম্পত্তি নিয়ে নানা ধরনের মামলার উদ্ভব হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। যত দিন পর্যন্ত বাধ্যতামূলক অংশনামা আইন করা হবে না, তত দিন পর্যন্ত পৈতৃক সম্পত্তির দখল বেদখলের বিরোধ শেষ হবে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মামলায় ঢালাওভাবে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন না চেয়ে আমার মতে দেওয়ানি আদালতের মতো অ্যাডভোকেট কমিশন প্রতিবেদন চাইলে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে সহজ হবে।
লেখক  আইনজীবী, জেলা বার, চট্টগ্রাম।

No comments

Powered by Blogger.