মুসলমানরা মোদিকে ভোট দিয়েছে ভয় আর লোভে

গুজরাটে মুসলামানরাও নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দিয়েছে। এর পেছনে কাজ করেছে ভীতি আর লালচ। এ কথা বলেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) উত্তর প্রদেশের সিনিয়র নেতা কলরাজ মিশ্র।
তার মতে মুসলমানদের ভীতির পেছনের কারণটি হচ্ছে— তারা মোদির বিপক্ষে গিয়ে তার চক্ষুশূল হতে চায়নি। আর লোভের কারণটি হলো, উন্নতির সুযোগ পাওয়া।

কলরাজ বলেন, মুসলমানরা বিজেপি নেতা মোদিকেই ভোট দিয়েছে। কারণ তাদের মনে হয়েছে মোদি’ই সরকার গঠন করবেন। সরকারের সঙ্গে থাকলেই তাদের উন্নতি সম্ভব। আসল কথা হলো, তারা মোদির চোখের বালি হতে চায়নি।

এছাড়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছা ও ত‍ৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুজরাটে তার কোনও বিকল্প নেই। জাতীয় পর্যায়ে নরেন্দ্র মোদি একজন শীর্ষ নেতা। তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে পুরো দেশেই। সময় আসলে আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব, প্রধানমন্ত্রী পদে কে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে।

তবে হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের কাছে বিজেপির পরাজয় প্রসঙ্গে উত্তর প্রদেশ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে লখনৌ থেকে নির্বাচিত এমএলএ বিজেপি’র সিনিয়র এ নেতা বলেন, সেখানে প্রার্থী নির্বাচন সঠিকভাবে হয়নি। তাই হারতে হয়েছে। অনেক বাজে লোক দলে ঢুকে গিয়েছিল। মানুষ ভেবেছে, আরে, এরাও তো খারাপ লোকের দল। তাই ফলাফল উল্টে যায়।

এদিকে, টাইম্স অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সমাজবাদী পার্টি নেতা ও উত্তর প্রদেশ কেবিনেট মন্ত্রী মোহাম্মদ আজম খানও দাবি করেছেন, গুজরাটে মুসলমানরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে নিজেদেরকে নিরাপদ আর সুরক্ষিত রাখার জন্য। সেখানে নরেন্দ্র মোদির বিজয়ে হিন্দুত্ববাদী আরএসএস (রাষ্ট্রী স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ) এবং বিজেপি কোনো কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না।

তিনি বলেন, গুজরাটের সংখ্যালঘুরা অতীতে মোদির দ্বারা যেসব বিপদ সয়েছে তা থেকে নিরাপদে থাকার জন্যই তার পক্ষে ভোট দিয়েছে।  

প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ২০০২ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় মুসলিম নিধনে তার ইন্ধন থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ওই ‍দাঙ্গায় ৭৯০ জন মুসলমান ও ২৫৪জন হিন্দু নিহত হন। এ প্রসঙ্গে গুজরাট দাঙ্গায় নিহত সাবেক কংগ্রেস দলীয় এমপি এহসান জাফরির বিধবা জাকিয়া জাফরির অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত দল ২০১০ সালের ডিসেম্বরে দাখিল করা প্রতিবেদনে জানায়, গুজরাট দাঙ্গায় মোদির কোনো সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ওই প্রতিবেদনেরও সমারোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে।

জীবনাচারে মিতব্যয়ী এবং কাজপাগল এই নেতা গুজরাতে বেশ জনপ্রিয়। ২০০১ সাল থেকে গুজরাটের শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন মোদি।


গত ২০ ডিসেম্বর ঘোষিত নির্বাচনী ফলাফলে টানা তৃতীয়বারের মতো ‍ভারতের গুজরাট প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদি। আর এর মাধ্যমে বিজেপির হয়ে আগামী সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের লড়াই করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছেন তিনি।

১৮২ আসন বিশিষ্ট গুজরাটের প্রাদেশিক পরিষদে বিজেপির প্রার্থী মোদি পেয়েছেন ১১৫টি আসন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস দলের প্রার্থী পেয়েছে মাত্র ৬০ আসন। অন্যান্য প্রার্থীরা পেয়েছেন ছয়টি আসন।

তবে উত্তরাঞ্চলীয় হিমাচল প্রদেশে সামান্য ব্যবধানে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। দলটি ওই প্রদেশে পেয়েছে ৩৬টি আসন এবং বিজেপি পেয়েছে ২৬টি আসন।

গুজরাটে গত ১৩ ও ১৭ ডিসেম্বর দুই ধাপে নির্বাচন হয়। হিমাচল প্রদেশে ৪ নভেম্বর ও ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়।
গুজরাটের ৪ কোটি ভোটারের ৭১ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছে। হিমাচলে ভোট দিয়েছে ৭৪ শতাংশের বেশি ভোটার যা একটি রেকর্ড সংখ্যক।

No comments

Powered by Blogger.