বৈধকরণের বিকল্প নেই- অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা

ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদেশে টেলিফোন কল আদান-প্রদানের বৈধ অনুমতি না থাকায় সরকার প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবহার করে গত তিন বছরে লেনদেন হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা।
বৈদেশিক কলের তথ্য সংরক্ষণ না করে লোপাট করা হয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা, যা রাজস্ব আয় হিসেবে জমা হতে পারত সরকারের কোষে। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ক্যারিয়ার/বাহকের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে অবৈধ ব্যবসা করে আত্মসাৎ করা হয়েছে আরও প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত হিসাব করা হলে সরকারের হারানো মোট রাজস্ব আয়ের অঙ্কটি সম্ভবত কয়েকটি পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের অঙ্ক ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে: তাঁরাই অবৈধ ভিওআইপির মূল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন কিছু অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরও সরকারি প্রশাসনের ওপর যাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়ে গেছে। এই বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা মিলিতভাবে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসাকে একধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন বললে কম বলা হয়; বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে রাষ্ট্রকে বঞ্চিত করার অনৈতিক পদ্ধতিকে তাঁরা সরকারি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার অঙ্গীভূত করে ফেলেছেন। নিজেদের ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধার স্বার্থে যাঁরা স্থায়ী ও নিয়মিতভাবে রাষ্ট্রের এই মাত্রার ক্ষতিসাধন করে চলেছেন, তাঁদের গণশত্রু ছাড়া আর কী বলা যায়? দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মন্তব্য করেছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের এহেন সংশ্লিষ্টতা থাকলে ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়।’
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতাকে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও দুর্নীতির স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক রূপের একটা বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা যায়। দুদক এ বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে, প্রায় ৩০ জন সরকারি কর্মকর্তার অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছে, ছয়টি মামলা দায়ের করেছে এবং বিটিসিএলের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাঁদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দুদক দৃশ্যত যথাযথ ভূমিকাই গ্রহণ করেছে; আমরা চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেন আগাগোড়াই নিশ্চিত করা হয়। আমরা অতীতে দেখেছি, যাঁরা দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হন, তাঁরা অসদুপায়ে অর্জিত ওই অর্থসম্পদের জোরেই আইন প্রয়োগ প্রক্রিয়ার ফাঁকফোকর দিয়ে অক্ষতভাবে বের হয়ে যান। এঁদের ক্ষেত্রে যেন তা না হয়, তাঁরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পান, তা নিশ্চিত করা জরুরি।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা প্রায় অসম্ভব, কারণ আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণে এই ব্যবসা কারিগরি দিক থেকে বেশ সহজ ও আর্থিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক। নির্দিষ্ট অঙ্কের লাইসেন্স ফির বিনিময়ে এই ব্যবসাকে বৈধতা দেওয়াই অধিকতর বাস্তবসম্মত। তার ফলে সরকারের রাজস্ব আয় হবে এবং জনগণও অপেক্ষাকৃত কম খরচে আন্তর্জাতিক টেলিফোন সেবার সুযোগ পাবে।

No comments

Powered by Blogger.