চট্টগ্রামে জামায়াত শিবিরের তাণ্ডব ৫ পুলিশ জখম

চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবির আকস্মিকভাবে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্যকে জখম করেছে। ছিনিয়ে নিয়েছে থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ২০ রাউন্ড গুলি এবং একটি ওয়াকিটকি। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরকর্মীরা বিআরটিসির দোতলা বাস, যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, অটোরিকশাসহ অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় নগরীর ষোলশহর এলাকায় এ তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির।
ঘটনার পর ষোলশহর এলাকা থেকে তিনজন এবং দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে ৩৮ জনকে আটক করে পুলিশ।
আহত সবাই নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার পুলিশ সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, সকালে একটি পিকআপ ভ্যানে করে পাঁচ পুলিশ সদস্য দামপাড়া পুলিশ লাইন থেকে জ্বালানি আনতে যাচ্ছিলেন। পথে ষোলশহর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে অতর্কিতে হামলা চালানো হয়।
এ সময় উপপরিদর্শক বশির উদ্দিন, কনস্টেবল ইলিয়াছ, ফিরোজ, চালক কনস্টেবল ছিদ্দিক আহমদ এবং আনসার সদস্য নূরুল ইসলাম আহত হন। গাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়। আহতদের মধ্যে ফিরোজ ও নূরুল ইসলামকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূরুল ইসলাম বলেন, 'হামলার সময় শিবিরকর্মীরা আমার কোমরে বাঁধা থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ২০ রাউন্ড গুলি ছিনিয়ে নিয়েছে।'
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ করা এবং জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে সকাল পৌনে ১০টার দিকে নগরীর জিইসি মোড় এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নগর শাখার আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম এমপি। মিছিলটি ষোলশহর এলাকার কাছাকাছি যাওয়ার পর মিছিল থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানে হামলা চালানো হয়। এর পর পরই এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় বিআরটিসির দোতলা বাসে। এতে বাসটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ওই সড়ক দিয়ে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস এবং অটোরিকশাও ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। তারা ষোলশহর ছাড়াও তাণ্ডব চালায় প্রবর্তক মোড় ও মিমি সুপার মার্কেট এলাকায়। প্রবর্তক মোড়ে গাড়ি ভাঙচুর এবং বেসরকারি প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির কাচ ভাঙচুর করায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রবর্তক মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালাক আবদুল হান্নান বলেন, 'ঘটনার সময় আমি গাড়ি নিয়ে ষোলশহর মোড়ে ছিলাম। আমার গাড়িও তাণ্ডব থেকে রক্ষা পায়নি।'
মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসে তল্লাশি : পুলিশ জানায়, সকালে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবের পর দুপুরে তাদের কাছে খবর আসে, হামলাকারী শিবিরকর্মীদের একটি অংশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান নিয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর পরই সিএমপির উপকমিশনার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহেল বাকী এবং উপকমিশনার (উত্তর) মিরাজ উদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সেখানে তল্লাশি শুরু করে। একপর্যায়ে ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলা থেকে ৩৮ জনকে আটক করা হয়। পরে শিবির নিয়ন্ত্রিত কক্ষগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে জিহাদসংক্রান্ত বেশ কিছু বই উদ্ধার করা হয়।
সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুরের পর ছাত্রশিবিরের কিছু কর্মী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করছে_এমন খবর পেয়ে সেখানে তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে মোট ৩৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য স্থান থেকে আরো তিনজনসহ মোট ৪১ জনকে আটক করা হয়।
পুলিশের ওপর হামলা ও তাণ্ডব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামী ছাত্রশিবির মহানগর (উত্তর) শাখার সভাপতি মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, 'আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বাধা দিয়েছে। এ কারণে সেখানে সামান্য সমস্যা হয়েছে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিবিরের কেউ পুলিশের কাছ থেকে গুলি ছিনিয়ে নেয়নি। মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাস থেকে অন্যায়ভাবে শিবিরকর্মীদের আটক করা হয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, মেডিক্যাল ছাত্রদের কেউ মিছিলে যায়নি, এর পরও পুলিশ ছাত্রলীগের উসকানিতে সেখানে তল্লাশি চালিয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মফিজুর রহমান জুম্মা বলেন, ছাত্রশিবিরই পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, ভাঙচুরের পর ছাত্রশিবিরের কর্মীরা ছাত্রাবাসের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে তৃতীয় তলায় অবস্থান নেয়। এরপর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয় এবং পরে পুলিশ তাদের আটক করে।

কুমিল্লায় হামলায় ৩ পুলিশ আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক (কুমিল্লা) জানান, গতকাল বিকেলে মহানগরীর রেসকোর্স এলাকায় মিছিল বের করার সময় পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক ও দুই কনস্টেবলসহ আটজন আহত হয়েছে। পরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে আটক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বিকেলে নগরীর রেসকোর্স এলাকায় মিছিল বের করার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। খবর পেয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে টহলরত পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ সময় এসআই সাইফুলসহ আটজন আহত হন। পরে রেসকোর্স এলাকার ইস্টার্ন ইয়াকুব প্লাজা থেকে সাতজন, সেবা হসপিটাল থেকে তিনজন ও লাইট অব বেঙ্গল থেকে একজনসহ ১৪ জনকে শিবিরকর্মী সন্দেহে আটক করা হয়।

রাজশাহীতে পুলিশের গাড়িকে ধাওয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী) জানান, শিবিরের নেতা-কর্মীরা দুপুর পৌনে ২টার দিকে নগরীর মালোপাড়া এলাকা থেকে মিছিল বের করে কাদিরগঞ্জ মহিলা কলেজের সামনে এসে জড়ো হয়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে একটি পুলিশের ভ্যান আসতে দেখে মিছিলকারীরা মহিলা কলেজের সামনে ইটপাটকেল নিয়ে এগিয়ে এলে পুলিশ ভ্যানটি পথ বদলে নগর ভবনের দিকে চলে যায়। ওই ভ্যানে অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এরপর শিবিরকর্মীরা সেখান থেকে সটকে পড়ে আত্মগোপন করে। পরে কয়েক শ পুলিশ এসে ওই এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায়। পুলিশের সঙ্গে লাঠিসোঁটা নিয়ে মাঠে নামে স্থানীয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরাও। পুলিশ এ সময় পথচারীসহ অন্তত ছয়জনকে আটক করলে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

No comments

Powered by Blogger.