কাল পবিত্র হজ, হাজিরা এখন মিনায় by ফেরদৌস ফয়সাল

কাল বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ। হাজিরা এখন মিনায় অবস্থান করছেন। গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা গাড়িতে, পায়ে হেঁটে মক্কা থেকে মিনায় পৌঁছান। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ২২ লাখ মুসল্লি এবার হজ পালন করছেন।


মিনা এখন যেন তাঁবুর শহর। চারদিকে তাঁবু আর তাঁবু। হাজিরা এই তাঁবুতে অবস্থান করছেন। তাঁরা পাঁচ দিন অবস্থান করবেন এখানে। তাঁবুগুলো দেখতে চৌচালা ঘরের মতো। ভেতরে পর্যাপ্ত আলো আছে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই তাঁবুতে শোয়া-বসা ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে শৌচাগার ও পানির কল। আছে টেলিফোন সংযোগ।
মিনায় কিছুদূর পর পরই রয়েছে হাসপাতাল। হাজিদের সেবায় সেখানে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও নিরাপত্তাকর্মী আছেন। আল্লাহর মেহমানদের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য মিনায় যাওয়ার সব রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজিদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
৯ জিলহজ বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশে ৮ জিলহজ বৃহস্পতিবার) ফজর নামাজের সময় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজিরা থাকবেন আরাফাতের ময়দানে। হজের মূল অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে থাকে এখানেই। ওই দিন রাতে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন হাজিরা। পরদিন ভোরে সেখান থেকে আবার মিনায়। সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ এবার মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় হাজিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য আরাফাত থেকে মিনা পর্যন্ত মনোরেল সেবা চালু করেছে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার এই পথে নয়টি স্টেশন (আরাফাতে তিনটি, মুজদালিফায় তিনটি এবং মিনায় তিনটি) রয়েছে। বাংলাদেশের জয়পুরহাটের বাসিন্দা বর্তমানে মনোরেলের মানবসম্পদ সরবরাহকারী নুরুল আমিন জানান, প্রতিটি ট্রেনে রয়েছে ১২টি বগি। একটি ট্রেনে সাড়ে তিন হাজার হাজি যাতায়াত করতে পারবেন। পাঁচ দিনের জন্য প্যাকেজ জনপ্রতি ভাড়া ২৫০ রিয়াল।
মিনায় পৌঁছে হজযাত্রীরা সেখানে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখছেন। এর মধ্যে রয়েছে জামারা (শয়তানের প্রতিকৃতিতে পাথর নিক্ষেপের স্থান), মসজিদে খায়েফ, মিনার তিনটি সেতু (বাদশা খালেদ, বাদশা আবদুল্লাহ, বাদশা ফয়সাল), পায়ে হাঁটার পথ (টিনশেড নামে পরিচিত), মোয়াল্লেম কার্যালয় (অর্থের বিনিময়ে বিমানবন্দর থেকে হাজিদের মক্কা-মদিনায় পৌঁছানো, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে থাকা, খাওয়া, যাতায়াতসহ সবকিছুর ব্যবস্থা যাঁরা করে থাকেন, তাঁদের বলা হয় মোয়াল্লেম) ও নতুন চালু হওয়া রেলস্টেশন।
হাজিরা জামারায় শয়তানের তিন প্রতিকৃতিতে যাতে নির্বিঘ্নে পাথর নিক্ষেপ করতে পারেন, সে জন্য গত কয়েক বছর ধরে ওই স্থানটির সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে। সৌদি গ্রাম ও পৌরবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হাবিব জয়নাল আবেদিন জানান, জামারা কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত, এখানে তাপমাত্রা থাকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য জামারার ভেতরে একাধিক ক্লোজসার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত টয়লেট, খাবারের দোকান ও সেলুন। জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য রয়েছে হেলিপ্যাড।
প্রতি ঘণ্টায় তিন লাখ হাজি পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। পাথর নিক্ষেপের সুবিধার্থে মিনার পূর্বদিক থেকে আসা হাজিরা আসবেন নিচতলা ও দোতলায়, মক্কা থেকে আসা হাজিরা তৃতীয় তলায়, উত্তর দিক ও মোয়াইসিম থেকে আসা হাজিরা চতুর্থ তলায় এবং আজিজিয়া থেকে আসা হাজিরা পঞ্চম তলায় পাথর নিক্ষেপ করবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে ১২টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রয়েছে। হাজিদের পাথর মারার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মোয়াল্লেম নম্বর অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে পাথর মারতে হবে। সৌদি মোয়াচ্ছাসা (হজের সার্বিক বিষয় যারা দেখাশোনা করেন) ১০ জিলহজ সকাল ছয়টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং ১১ থেকে ১৩ জিলহজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত পাথর নিক্ষেপ না করতে হাজিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
হজ ব্যবস্থাপনায় মুঠোফোনে খুদে বার্তার পাশাপাশি আইভিআর (ইন্টার-অ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স) সার্ভিস চালু হয়েছে। এ সেবাটি পেতে হলে মুঠোফোন থেকে ১৬২২০ নম্বরে ফোন করে তথ্য জানা যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত এক লাখ ১১ হাজার ২৭৯ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মক্কায় পৌঁছেছেন। এবার পবিত্র হজ পালন করতে এসে এ পর্যন্ত স্বাভাবিক কারণে ৫৯ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন।
প্রতিদিন মৃত হাজির তালিকা ও বুলেটিনে হজের তথ্য জানা যাবে www.hajj.gov.bd. ঠিকানায়।

No comments

Powered by Blogger.