সহজে ব্যবসা করা- বৈশ্বিক সূচকে ৭ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ

অবকাঠামো, বিশেষত বিদ্যুৎ পাওয়া দুনিয়াজুড়েই ব্যবসায়ীদের একটি বড় উদ্বেগ। আর এই বিদ্যুৎ পাওয়া কোথায় সবচেয়ে কঠিন? এই প্রশ্নের উত্তরে নাম উঠে এসেছে বাংলাদেশের। কেননা, বিশ্বের ১৮৫টি দেশে বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়ার কাজটি যদি সহজ থেকে কঠিন এই ক্রমানুসারে সাজানো হয়,


তাহলে তালিকার সর্বশেষ নাম হলো বাংলাদেশ। এখানে বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে অন্তত নয়টি পর্যায়ক্রম সম্পন্ন করতে হয়। আর গড়ে সময় লাগে ৪০৪ দিন। অথচ এক বছর আগে লাগত ৩৭২ দিন।
বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আইএফসি (ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন) ‘সহজে ব্যবসা করার সূচক-২০১৩’ প্রকাশ করেছে গতকাল মঙ্গলবার। এতে মোট ১০টি বৃহত্তর নির্দেশিকা আছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বিদ্যুৎ-সংযোগ প্রাপ্তি।
এতে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের তাদের চাহিদা ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ পেতে সৌর প্যানেল স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রাপ্তিকে কঠিন করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। আর গত বছর (২০১২ সূচকে) অবস্থান ছিল ১২২তম। তার মানে, এক বছরের ব্যবধানে বৈশ্বিক এই সূচকে সাত ধাপ পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর ২০১০ সালে (২০১১ সূচকে) অবস্থান ছিল ১১৮তম। অর্থাৎ, এই বৈশ্বিক সূচকে ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশের পরে আছে ভারত, ভুটান ও আফগানিস্তান। তবে ভারতের অবস্থান গতবারের মতো এবারও ১৩২তমে অপরিবর্তিত আছে। আর ২০০৫ থেকে শুরু করে আট বছরে ভারতই দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছে। আইএফসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এই সময়কালে ১৭টি প্রাতিষ্ঠানিক বা নিয়ন্ত্রণমূলক বিধি সংস্কার করেছে।
চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আইএফসির প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে এ জন্য ৪১টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় এবং এক হাজার ৪৪২ দিন পর্যন্ত লেগে যায়, যেখানে সিঙ্গাপুরে লাগে ১৫০ দিন। ভারত ও শ্রীলঙ্কাও বাংলাদেশের খুব কাছাকাছি আছে।
এই প্রতিবেদন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত ২০১২ সালের জুন মাসের। প্রতিবেদনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার আনুষঙ্গিক পরিবেশের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। ব্যবসার পরিবেশকে ১০টি বৃহত্তর নির্দেশিকা বা বিষয়ে বিন্যস্ত করে সেগুলোর অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তারপর তা সূচকে রূপান্তর করা হয়েছে। এসব উপসূচককে সমন্বিত করে মূল সূচক নির্ণীত হয়েছে। তারপর বিভিন্ন দেশের অবস্থানক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘স্মার্টার রেগুলেশনস ফর এসএমইস’।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টিকে। বলা হয়েছে, ঋণবিষয়ক তথ্য পেতে অনলাইন-সুবিধা চালু করে বাংলাদেশ ঋণ-সুবিধার ক্ষেত্রে অগগ্রতি করেছে। এটিকেই ব্যবসা সহজ করার ক্ষেত্রে এক বছরে (জুন ২০১১-জুন ২০১২) বাংলাদেশের সংস্কার হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম। অবশ্য গতবার ১৮৩টি দেশের মধ্যে অবস্থান ছিল ৭৮তম। সে হিসেবে এখানেও কিছুটা অবনমন হয়েছে। তার পরও এটি ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়ের জন্যই কিছুটা শক্তিশালী আইনি অধিকার ও অধিকতর তথ্যের নির্দেশ করে।
সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সহজে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে ভালো দেশ হলো সিঙ্গাপুর। এরপর যথাক্রমে হংকং ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থান। চতুর্থ স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর পর্যায়ক্রমে ডেনমার্ক, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম থেকে অষ্টম স্থান পর্যন্ত গতবারের অবস্থানই অপরিবর্তিত আছে। নবম স্থানে উঠে এসেছে জর্জিয়া, গতবার যার অবস্থান ছিল ১৬তম। আর দশম স্থানে এসেছে অস্ট্রেলিয়া, গতবার যে ছিল ১৫তম।

No comments

Powered by Blogger.