সাক্ষাতে অনাগ্রহের কথা নাফিসের মুখ থেকেই শুনতে চায় বাংলাদেশ

সন্ত্রাসী হামলা চেষ্টার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসের সঙ্গে একান্তে কথা বলার সুযোগের (কনসুলার অ্যাকসেস) অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ মিশন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নাফিসের অনীহার কথা বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন। এর পরও রাষ্ট্রদূত বলেছেন, অনীহার কথা তিনি নাফিসের মুখ থেকেই শুনতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা নাফিসের যে মনোভাবের কথা জানিয়েছেন, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে কি না জানতে চাইলে ওই কূটনীতিক বলেন, 'আমরা কনসুলার অ্যাকসেস চেয়েছি। আমরা কনসুলার অ্যাকসেস চাওয়ার অবস্থানেই আছি।'
জানা গেছে, নাফিস বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতে রাজি না হলে কনসুলার অ্যাকসেস পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
কনসুলারবিষয়ক জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, আটক ব্যক্তি তাঁর দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধি, এমনকি নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন।
ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ মিশনের প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর শনি ও রবিবার ছিল দেশটিতে ছুটির দিন। এরপর নাফিসের বিষয়ে আর নতুন কোনো তথ্য ঢাকায় আসেনি। তবে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নাফিসকে তাঁর প্রাপ্য অধিকারগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ মিশন। নাফিস যদি আইনগত সহায়তা চান, বাংলাদেশ তা দেবে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্যক্তি নাফিসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নিউ ইয়র্কে ফেডারেল রিজার্ভ উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। এটি প্রমাণ হলেই তাঁকে দোষী বলা যাবে। স্টিং অপারেশনের মাধ্যমে এফবিআইয়ের এজেন্টরা গত বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে। স্টিং অপারেশন নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে বিতর্ক থাকলেও তা দেশটির আইনে বৈধ।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ নাফিস ইস্যু পর্যবেক্ষণ করছে। সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার নাগরিক হিসেবে নাফিসের অধিকারগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র তথ্য-উপাত্ত চাইলে তাতেও বাংলাদেশের সহযোগিতার মনোভাব রয়েছে। নাফিসের মামলাটি চলবে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অভিযোগপত্র গ্র্যান্ড জুরিতে গেছে। গ্র্যান্ড জুরি তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করতে পারে আবার মামলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারে। তবে অতীতে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গ্র্যান্ড জুরি মামলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছে। ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ব্যক্তি নাফিসের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হয়েছে। নাফিসের জন্য দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা যাতে কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ জানিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক পুলিশের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সোর্সের পদত্যাগ
নিউ ইয়র্ক পুলিশের সোর্সের দায়িত্ব পালন করতেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক। সন্দেহভাজন মুসলিম জঙ্গিদের খোঁজ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর। সম্প্রতি ওই দায়িত্ব থেকে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র এ কথা জানিয়েছে। খবর রয়টার্স ও ইউএসএ টুডের।
নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলা চেষ্টার অভিযোগে বাংলাদেশি তরুণ নাফিস গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই সোর্সের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির কথা জানা গেল। তবে নিউ ইয়র্ক পুলিশের ওই সূত্রের দাবি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই সোর্সের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সঙ্গে নাফিসের গ্রেপ্তার বা ওই ঘটনার তদন্তের কোনো সম্পর্ক নেই। ওই সোর্সের নাম বা তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়নি নিউ ইয়র্ক পুলিশের ওই সূত্র। সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, নিউ ইয়র্ক পুলিশ সূত্র জানিয়েছে ১৯ বছর ওই সোর্সের দায়িত্ব ছিল সন্দেহভাজন মুসলিম জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। তাঁদের কেউ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। গত ২ অক্টোবর ওই সোর্স দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

No comments

Powered by Blogger.