সেবা দিয়ে চলেছে তারা by দিল মনোয়ারা মনু

৫২ বছরের ফাতেমা রহমান। স্তনের বোঁটাসংলগ্ন স্থানে একটি টিউমারের অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলেন বেশ কিছুদিন থেকেই। শিক্ষিত কিন্তু সচেতন নন। তাই তেমন গুরুত্ব দেননি। যখন তিনি বুঝতে পারলেন, তত দিনে এ রোগ দুটি ধাপ অতিক্রম করে তৃতীয় পর্যায়ে চলে গেছে।


পরে বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি জেনেছেন, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি পরিচালিত সিতারা আহসানউল্লাহ ব্রেস্ট ক্যানসার কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে। জানতে পারেন, রোগীর আয়ুষ্কাল সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা পেতে স্টেজিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কত দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় এবং কী ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার তা জানা যায়। ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফাতেমা রহমান হু হু করে কেঁদে উঠলেন। কী করে এ খবর তিনি দেবেন তাঁর পরিবারকে। ক্যানসার শব্দটার কারণে জীবনের পুরো ছন্দই যেন মুহূর্তে বদলে গেল ফাতেমার। কিন্তু সেই দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়াল বাংলাদেশ মহিলা সমিতি। যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, সঠিক চিকিৎসা নিলে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। সেখান থেকে বিনা মূল্যে চিকিৎসার পরামর্শ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিষ্ঠিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও সরকারি হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা—সবই করল এই সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান।
মহিলা সমিতির এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সংযুক্ত আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার বিভাগ, মিরপুর আজমত আলী হাসপাতাল ও কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সম্প্রতি পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারও কম খরচে এই ইনস্টিটিউটের পাঠানো রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। প্রথম আলো বিনা মূল্যে এদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের বিজ্ঞাপন প্রচার ও জনসচেতনতা কার্যক্রম বৃদ্ধিতে নানা প্রকার সহযোগিতা করছে।
মহিলা সমিতি পরিচালিত এই ইনস্টিটিউট তাদের আগামী কর্মকাণ্ডের একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে, যার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হচ্ছে—
 জনসচেতনতা বিভাগ।
 অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা বিনা মূল্যে রোগ নির্ণয় বিভাগ।
 হ্রাসকৃত মূল্যে এবং দরিদ্র রোগীর ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে সহায়তা দান বিভাগ।
 মেডিকেল কাউনসেলিং বিভাগ।
 রোগীর তথ্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা বিভাগ।
 ক্লিনিক্যাল গবেষণা বিভাগ।
 কর্মরত চিকিৎসকদের উন্নততর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বিভাগ।
 আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমমনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বিভাগ।
 অলাভজনক এই মানবসেবা কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অর্থ সংগ্রহ বিভাগ।
 সর্বোপরি ২০ শয্যাবিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ শুধু ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল গঠনের প্রস্তাব।
২০০৬ সাল থেকে সপ্তাহে তিন দিন তারা বিনা মূল্যে রোগীদের এবং এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজটি ধারাবাহিকভাবে করে আসছে। এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বাইরেও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে কর্মসূচি পালন করছে। ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আট হাজার ৬০২ জন রোগীকে সেবা প্রদান করেছে। এই প্রতিষ্ঠান এ রোগে আক্রান্ত রোগী, যাঁরা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে একটি ‘সারভাইভারস কমিটি’ও গঠন করেছে, যাতে রোগমুক্ত এই সদস্যদের পরামর্শমূলক আশ্বাসবাণী শুনে চিকিৎসারত অন্য রোগীরা সাহস ও মনোবল ফিরে পান।

No comments

Powered by Blogger.