পুলিশ স্টেশনগুলোতে অপতৎপরতা-সরকারের আমলে নেওয়া অতি জরুরি

দেশের থানাগুলোর চালচিত্র নিয়ে পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত সরেজমিন প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিটি থানার পরিস্থিতি কমবেশি একই রকম। রাতভর পুলিশ স্টেশনে চলে লোক ছাড়িয়ে নেওয়া এবং ধড়পাকড়ের তদবির। ইয়াবা-ফেনসিডিল বিক্রেতা থেকে শুরু করে দাগি আসামি ছাড়িয়ে নিতে দালালরা ব্যস্ত। কেউ নালিশ জানিয়ে,


আকুতি-মিনতি করেও থানা পুলিশকে ঘটনাস্থলে নিতে পারছে না। দিন বা রাতে কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে যথাসময়ে তাঁর চেয়ারে পাওয়া যাচ্ছে না। মোদ্দা কথা, যার ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্য নেই, থানা থেকে এমন লোকের কোনো সেবা পাওয়া এখন বাংলাদেশে অসম্ভব এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশের প্রায় প্রতিটি থানার জুরিসডিকশনে বা এখতিয়ারে মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, জালিয়াত চক্রের সঙ্গে রয়েছে পুলিশের ওঠাবসা। আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও দেখা যায় পুলিশের চোখে তারা পলাতক। এসব সমস্যা এক দিনের নয়, দীর্ঘদিনের। জনগণের মধ্যে ধারণা বিদ্যমান, কেউ ঘুষ না খেলে পুলিশে থাকতে পারে না। পুলিশের এই ঘুষবাণিজ্য, কর্তব্যে অবহেলা ও অপরাধীদের সহায়তা করার অভিযোগ নিয়ে সংবাদপত্রের সম্পাদকীয়তে প্রতিনিয়তই লেখা হয়ে থাকে, 'আমাদের অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তৎপরতা বাড়াতে হবে' ইত্যাদি ধরনের মন্তব্য। কিন্তু বাস্তবে যেন কোনো ব্যাপারে কারো কোনো বিকার বা মাথাব্যথা নেই। রাজনৈতিক সরকারগুলোর মধ্যে এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, বিশেষ কোনো উদ্যোগ নিতেও দেখা যায় না। ফলে দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে আইনের শাসন ও আইনশৃঙ্খলার সুস্থ পরিবেশ থেকে। বরং দিন দিন পুলিশের অপরাধ প্রবণতার পাশাপাশি সমাজে অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি জনগণের সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে সত্যিকারে মুক্তি পেতে হলে নতুন কোনো ব্যবস্থার কথা ভাবতে হবে। সেটা নির্ভর করে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। যেমন দক্ষ ও পরীক্ষিত সদস্যদের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যদের কর্মকাণ্ড তদারকি করা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর কোনো উদ্যোগই কোনো সরকার নেয় না। প্রায়ই শোনা যায় পুলিশ বিভাগকে আধুনিক করার কথা। আমরা মনে করি না যে পুলিশের হাতের পুরনো রাইফেলটি ফেলে নতুন রাইফেল দেওয়া বা পুরনো পোশাক-গাড়ি বাতিল করে নতুন পোশাক-গাড়ি প্রদান করলেই এই বিভাগ আধুনিক হবে। বরং চিরাচরিত মানসিকতা ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি থেকে এই বিভাগকে সরিয়ে আনলেই কেবল পুলিশের আধুনিকায়ন হতে পারে, নচেৎ নয়। বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। অথচ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে এ দেশে চরম অশান্তি বিরাজ করছে। দেশে বারবার জনগণের ভোটে যে রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তন হয়, তার প্রধান কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে জনগণের 'ব্যালট প্রতিবাদ'। অথচ রাজনৈতিক কোনো সরকারই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখাতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রধান দায়িত্ব পুলিশ স্টেশনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের। তাঁদের পেশাদারিত্বের মনোভাব নিশ্চিত না হলে সে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে কোনো নিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে না। সুতরাং সরকারের এই বিভাগের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ও পুলিশের কর্মকাণ্ডে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা আরো একবার জোর তাগিদ দিচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.