চরাচর-দারিদ্র্যমুক্ত হোক বিশ্ব by জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

গানপাগল এক বাবা তাঁর ছেলের নাম রাখলেন বুলবুল। গানের পাখি বুলবুল। বুকের এই মানিকের অসুখ হলো। চিকিৎসা তো দূরের কথা এক বিন্দু দুধও খাওয়াতে পারলেন না। চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায়, বিনা পথ্যে মারা গেল বুলবুল।


গরিব হওয়ার এই যন্ত্রণায় দগ্ধ দীনহীন নিঃস্ব বাবা লিখলেন, 'হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান/তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান'। এই বাবাটি আর কেউ নন, তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বেশির ভাগ মানুষই নিদারুণ অর্থকষ্টে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু দারিদ্র্য যখন পেটের ওপর দিয়ে যায়, তখন মানুষ আর ভালো থাকতে পারে না। যারা পেটের ক্ষুধা সহ্য করেও ভালো থাকেন তাঁরা খ্রিস্টের সম্মান নিয়ে বুলবুলের ভাগ্য বরণ করেন। তাই দারিদ্র্য একটা সমাজ, দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা। আপনি নিজে ধনী না গরিব তা বড় কথা নয়। যদি সামগ্রিকভাবে আপনি মনে করেন আপনার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর হবে তাহলে এই কাজে অতি অবশ্যই আপনাকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনার পাশের লোকটি গরিব হলে আপনি নিজে সুখে থাকতে পারবেন না। কিভাবে পারবেন না? ব্যক্তিগত জীবনের বেদনার একটা উদাহরণ দিয়ে তা বোঝাচ্ছি। গত পরশু মগবাজার ওয়্যারলেস মোড় থেকে আমার অতি শখের ও প্রয়োজনের অ্যানড্রয়েড ফোনটি ছিনতাই হলো। এই ফোনটি কিনতে আমাকে অনেক দিন ধরে খরচ বাঁচিয়ে চলতে হয়েছিল। ঘটনাটা ঘটার কিছুক্ষণ পর ভাবলাম, কী অবাক দেশ! রবীন্দ্রনাথের সেই বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ দূরে... কষ্ট করে আমি একটা জিনিস অর্জন করব আর অন্য আরেকজন একটা থাবা দিয়ে তা নিমেষেই অর্জন করে উধাও! থানা পুলিশ করা হলো। জিডিতে মোবাইলের জিপিএস পজিশন অ্যাটাচড করে দেওয়া হলো। ফলাফল, বেগার গলদঘর্ম। তার মানেটা কী দাঁড়াচ্ছে? সমাজের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে না পারলে আপনি কোনোভাবেই একা সুখে থাকতে পারবেন না। যারা একবেলা ভাত খাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছে তারা আপনাকে কেন ভালো থাকতে দেবে? আমাদের সবার আগে কাজ হলো মানুষের মুখে অন্তত দুবেলা ভাত আর রাতে মাথা গোঁজার জন্য একটা ছাউনির নিশ্চয়তা দেওয়া। গরিবি আর দুর্নীতি দুটি একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল। তবে পেটের দায় ছাড়া যারা দুর্নীতি করে তাদের শাস্তি রাখতে হবে ভয়াবহ। তাহলেই দুর্নীতি দূর হবে। আর তখন গরিবি দূর হবে স্বল্পতম সময়ে। ১৯৯৩ সাল থেকে ১৭ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য দূরীকরণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিবস পালন করে তো আর গরিবি দূর করা যাবে না। দয়া বলুন, করুণা বলুন আর যা-ই বলুন, এসব করতে নেই এমন একটা সমাজ পেতে, যে সমাজে দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের কারণে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। এমন সমাজই চাই যেখানে নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে রাতের মৌনতার আনন্দ নিতে বের হয়ে যেতে পারব রাস্তায়। থাকবে না কোনো ছিনতাইকারী বা ঠগের ভয়। বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত হোক।

জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

No comments

Powered by Blogger.