রকিবুলের ফেরার প্রত্যয়

জনকণ্ঠ : জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর তো অনেক দিন হয়ে গেল। রকিবুল : হ্যাঁ, অনেকদিন হলো আমি দলের বাইরে। শেষ গত বছর অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলেছিলাম। আসলে দলে ডাক পাওয়া, কামব্যাক করা এসব নিয়েই খেলোয়াড়ের জীবন।


মাঝে কিছুটা বাজে সময় গেছে বলেই এমনটা হয়েছে। এ নিয়ে আমি গত কয়েক মাস অনেক পরিশ্রম করেছি। সামনে জাতীয় লীগ। আশা করছি লীগে ভাল খেলে দলে কামব্যাক করতে পারব।
জনকণ্ঠ : ফেরার জন্য কি কি করছেন?
রকিবুল : ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাই পারফরম্যান্স দলের বিপক্ষে খেলার আগে আমাদের লম্বা সময় প্র্যাকটিস হয়েছে। সেখানে বোলিং, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি মেন্টালি এবং ফিজিক্যালি দিক নিয়েও কাজ হয়েছে। আর ম্যাচ প্র্যাকটিস তো হয়েছেই। সব মিলিয়ে একজন ক্রিকেটারের যা কিছু করা দরকার সব সুযোগই আমরা পেয়েছি। তাই সব কিছু মিলয়ে বলব প্রস্তুতি অনেক ভাল হয়েছে। ফেরার ব্যাপারে এসব কাজে দেবে।
জনকণ্ঠ : ফেরার ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
রকিবুল : আসলে এটা পুরোটাই নির্বাচকদের ওপর নির্ভর করছে। ক্রিকেটার হিসেবে আমার দায়িত্ব পারফর্ম করা। আমি সেটা করার চেষ্টা করছি। তারপরও প্রত্যাশার কথা যদি বলেন তবে আমি বলব, আমি আশাবাদী। কারণ ‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফরে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাইপারফরম্যান্স দলের বিপক্ষে আমার কিছু ভাল ইনিংস আছে। হয়ত তেমন লম্বা ইনিংস খেলতে পারিনি, কিন্তু লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করেছি। আর সামনে যেহেতু জাতীয় লীগ তাই এখানে ভাল করে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ আছে। সব মিলিয়ে আমি আশাবাদী।
জনকণ্ঠ : কিন্তু আপনার সাম্প্রতিক ফর্ম তো বলছে আপনি সেরা ছন্দে নেই?
রকিবুল : আমি সব সময় চেষ্টা করি নিজের সেরার চেয়ে সেরাটা দেওয়ার। যেটা বললাম, হয়ত বড় স্কোর করতে পারিনি; কিন্তু ভাল কিছু ইনিংস খেলেছি।
জনকণ্ঠ : আপনার ব্যাটিংয়ের একটা অভিযোগ অনেকে করে। সেটা হচ্ছে আপনি সে খেলে থাকেন। অনেকে আবার টি-টোয়েন্টির জন্য আপনাকে আদর্শ মনে করে না। এ বিষয়টি কিভাবে দেখেন?
রকিবুল : আমি মনে করি, সব ধরনের ক্রিকেট খেলার সামর্থ্যই আমার আছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমার পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে আপনি দেখবেন আমার সব ধরনের ইনিংসই আছে। এটা নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। আর সেøা খেলার বিষয়ে বলব, আমি চেষ্টা করি সব সময় পরিস্থিতি এবং টিম রুল মেনে খেলার। আর আমি যে পজিশনে ব্যাটিং করি সেই পজিশনে এ্যাটাকিং খেলা একটু কঠিনই। কারণ সে সময় ফিল্ডিং অনেক আক্রমণাত্মক থাকে। তাও পেনাররা যে শটে চার পায়, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দেখা যায় সেই শটে এক কি দুই রান পায়।
জনকণ্ঠ : পাইপলাইনে এখন অনেক প্লেয়ার। ফিরতে বা টিকে থাকতে তো তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে হবে।
রকিবুল : তা তো অবশ্যই। একজন প্লেয়ারের জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মানেই সব বাধা, সব পরীক্ষা অতিক্রম করেই সে স্থানে আসা। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো থাকবেই। আমি মনে করি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বাড়া দরকার। কারণ এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যত বাড়বে, বাংলাদেশ ক্রিকেট ততই ইম্প্রুভ হবে।
জনকণ্ঠ : জাতীয় লীগে একমাত্র ত্রিপল সেঞ্চুরি আপনার। কিন্তু এরপর আর সেই রকম ইনিংস আপনার কাছ থেকে আমরা পাইনি?
রকিবুল : আসলে ত্রিপল সেঞ্চুরি যেটা ছিল সেটা প্রমাণ করে আমার সামর্থ্য সম্বন্ধে। এরপর আর সে রকম ইনিংস না হলেও বেশ কয়েকটি বড় ইনিংস রয়েছে। চেষ্টা করছি, আশা করি ভবিষ্যতে আরও বড় ইনিংস হবে।
জনকণ্ঠ : জেমি সিডন্সের প্রিয় শীর্ষ ছিলেন আপনি। সিডন্স কেন আপনাকে এত বেশি পছন্দ করত?
রকিবুল : এটা অবশ্যই আমার ট্রালেন্ট দেখে ও আমাকে পছন্দ করত। আর ও (সিডন্স) বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাস পরই আমার জাতীয় দলে অভিষেক হয়। আমি শুরুতে খুব ভাল করেছিলাম। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে সেভেনটি প্লাস রান ছিল, এশিয়া কাপে ভাল করেছিলাম। আমার পারফরম্যান্স মূলত ওর ভাল লেগেছিল। এটাই মূল কারণ।
জনকণ্ঠ : ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে দলটি এবার আসছে সেটি তো অনেক শক্তিশালী দল। তার ওপর তারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে এসেছে। বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে কেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে?
রকিবুল : হ্যাঁ, ওরা দল হিসেবে গত ক’বছরের চেয়ে অনেক ভাল। ওদের পুরনো কিছু ভাল প্লেয়ার চলে আসছে। সব মিলিয়ে ওরা অনেক ব্যালেন্স টিম। আমি মনে করি, আমাদের দেশে ওদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং একটা সিরিজ হবে। আমরা যদি তিন ডিপার্টমেন্টেই ভাল করতে পারি, তবে অবশ্যই ভাল কিছু অর্জন করতে পারব এই সিরিজ থেকে।
জনকণ্ঠ : আপনার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্পটা যদি বলতেন।
রকিবুল : ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমাদের জেলা পর্যায়ের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলতাম। এরপর জেলা পার্যায় থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে আসি। নির্মাণ ক্রিকেট স্কুলেও খেলেছি। পরে এক সময় ডাক পাই অনুর্ধ-১৭, অনুর্ধ-১৯ দলে। এসব দল হয়ে আমার জাতীয় দলে আসা। আর আমার এখনও মনে আছে, জাহাঙ্গীরনগরের হয়ে বগুড়ার বিপক্ষে একটা ম্যাচে আমি খুব ভাল খেলেছিলাম। ওই ম্যাচে আমাদের জাতীয় পর্যায়ের সিলেক্টাররা ছিলেন। তারা আমার খেলা দেখে পছন্দ এবং আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন।
জনকণ্ঠ : এ পর্যন্ত উঠে আসার পেছনে কার অবদানকে সবচেয়ে বড় করে দেখেন?
রকিবুল : অবশ্যই প্রথমে সৃষ্টিকর্তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারপর আমার ফ্যামিলির কথা বলব। বাবা-মা, ভাইবোনদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। বিশেষ করে শফিক এবং রফিক ভাই আমাকে অনেক হেল্প করেছেন। শফিক ভাই নিজে ক্রিকেট প্লেয়ার ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.