নতুন ইতিহাস by মালিন্ডা লিউ

১৯৬৩ সালে মহাকাশের বাইরে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নারী নভোচারীর পদচারণার মাধ্যমে কোনো নারীর প্রথম মহাকাশ অভিযাত্রায় ইতিহাস গড়ার পর ১৯৮৩ সালে প্রথম মার্কিন নারী ওই ইতিহাসে নতুন নাম যুক্ত করার কৃতিত্ব দেখান। এবার ১৬ জুন চীনা বিমান বাহিনীর আরেক নারী মেজর ৩৩ বছর বয়সী লিউ ইয়াং তার দেশের পক্ষে মহাশূন্যে পদচিহ্ন এঁকে দেওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।


মাত্র দু'বছর আগে লিউ নভোচারী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি চীনা গণমাধ্যমের কাছে এক সেনসেশনে পরিণত হয়েছিলেন। তার ব্যক্তিগত জীবনের নানা খুঁটিনাটি জানার পর হঠাৎ করে চীনের মানুষ তার সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এই নারী ভালো রান্না করতে জানেন, এমনকি তার পেশাগত জীবনও বেশ উজ্জ্বল। ২০১০ সালে সামরিক বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। মহাকাশ বিশ্লেষক চেন ল্যানের মতে, লিকে নিয়ে চীনে মাতামাতিটা এমন এক উচ্চমার্গে পেঁৗছেছিল যে, হাই স্কুলের ইংরেজি ক্লাসে তার বক্তব্য সংবলিত ভিডিও পর্যন্ত ইন্টারনেটে পোস্টিং করা হয় এবং এর ওপরও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা হামলে পড়ে।
চীনের প্রথম নারী নভোচারী লিউ ইয়াংয়ের ২০০৩ সালে উড্ডয়নের সময় যদিও নিয়ন্ত্রিত একটা রাখঢাকের ব্যাপার ছিল এবার লিউর বাইরের মহাকাশে গমনের বেলায় এর উল্টো চিত্রই দেখা যায়। এবার ২৫০টিরও বেশি গণমাধ্যম আউটলেট মহাকাশ যান উৎক্ষেপণস্থল প্রত্যন্ত গোবি মরু এলাকায় উপস্থিত ছিল। অধিকন্তু মহাকাশ কর্মসূচির কর্মকর্তাদের দৃশ্যত লিউর মনুষ্যবাহী মহাকাশ যানে পাড়ি দেওয়ার ঘটনা প্রচারে বেশি আগ্রহী মনে হয়েছে। তারা তার এই মহাকাশ অভিযাত্রা মনুষ্যবাহী মহাকাশ যানের ক্ষেত্রে চীনের অগ্রগতিকেই শুধু নির্দেশ করে না, এটা জনগণের প্রত্যাশারও প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেন।
একটা সময় ছিল যখন চীনের মহাকাশ গুরুরা এসব কর্মসূচি নিয়ে জনসমক্ষে তেমন উচ্চবাচ্য করতেন না। তবে সেসব এখন পরিবর্তন হচ্ছে। চীনের মহাকাশ কর্মসূচিকে নিয়ে রাখঢাক করার দিন গত হয়েছে। উল্লেখ করা যায়, দেশের জনবিরল এলাকায় মাও সে তুং চীনের এই ছায়াচ্ছন্ন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ সাইট নির্ধারণ করেছিলেন। রকেট প্রতিযোগিতায় দীর্ঘকাল চীন বেশ পেছনে, তৃতীয় অবস্থানে ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বাজেট সংক্রান্ত টানাপড়েন ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন তাদের মহাকাশ কর্মসূচিকে পঙ্গু করে তোলার পর বেইজিংয়ের এক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। নাসা যখন তার শাটল যানগুলো গুটিয়ে নিচ্ছে, চীন তখন ২০২০ সালে মহাশূন্যে স্থায়ী স্টেশন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। চীন যখন এ ক্ষেত্রে পশ্চিমকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে তখন প্রাইভেট খাতের প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই মহাকাশ অভিযাত্রা পরিচালনার ব্যবস্থা হয়েছে। সে কারণে এখন কেউ কেউ বিপুল সরকারি অর্থব্যয়ে এই কর্মসূচি পরিচালনার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছেন।
তবে চীনের অধিকাংশ মানুষ এখনও দেশটির মহাকাশ কর্মসূচিকে সমর্থন করেন। এটা চীনের জাতীয় গর্বের বিষয় এবং দেশটির প্রযুক্তিগত প্রাগ্রসরতার প্রকাশ। চীনের বেসামরিক অর্থনৈতিক গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান ঝং দাজুনয়ের মতে, মহাকাশ গবেষণার জন্য ব্যয়টা যথার্থ। তার মতে, চীন মহাকাশে তার চিহ্ন না রাখতে পারলে ভবিষ্যতে অন্যদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি চলে যাবে। চীনের হাওয়াই নামে পরিচিত হাইনান দ্বীপে দেশটি তাদের নতুন মহাকাশ উৎক্ষেপণ সাইট নির্মাণ কাজ আগামী বছর শেষ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি মহাকাশ সেন্টারের মডেলে তৈরি এই নতুন সাইট এলাকায় হাজার হাজার পর্যটকের উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে। হয়তো লিউ ইয়াংই পরবর্তী ফ্লাইট পরিচালনায় থাকবেন।

খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তরিত

No comments

Powered by Blogger.