পাঠাগার সংকট-পাঠাভ্যাস নির্বাসন নয়

ঢাকা মহানগরীতে সিটি করপোরেশন পরিচালিত ২১টি গণপাঠাগারের অস্তিত্ব সংকটের যে খবর শনিবারের সমকালে ছাপা হয়েছে, তা যেন সারাদেশেরই সামষ্টিক পাঠ পরিস্থিতির খণ্ডচিত্র। সন্দেহ নেই, দেশে বইয়ের বাজার বিস্তৃত হয়েছে। আমাদের প্রকাশনা শিল্পও গুণগত দিক থেকে ক্রমাগত উন্নতি লাভ করেছে।


কিন্তু শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে তুলনা করলে তা যেন খানিকটা শ্লথই। বইয়ের প্রকাশনা ও বিক্রি বাড়ছে বটে, ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পাঠাভ্যাস বাড়ছে না। বিশেষ করে বই সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পাঠের সামষ্টিক উদ্যোগে যেন ভাটা চলছে। পাড়ায়-মহল্লায় নতুন নতুন পাঠাগার গড়ে ওঠার বদলে পুরনোগুলো বরং বন্ধ কিংবা অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। ডিসিসির পাঠাগারগুলো এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা মনে করি, এর কারণ বহুমাত্রিক। কেবল নতুন নতুন বই সংগ্রহ করে সেটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। তরুণ-তরুণী কিংবা শিক্ষার্থীদের পাঠাগারমুখী করে তুলতে হলে পরিবার থেকেই পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের যদি বই পড়ার অভ্যাস না থাকে, পরবর্তী প্রজন্ম কীভাবে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে? গত শতকেও সম্পন্ন বাড়িতে পারিবারিক পাঠাগারের চল ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা বিলুপ্ত হতে শুরু করেছে। অথচ শিশু-কিশোরের সুকুমার বৃত্তি জাগ্রত রাখতে বই পড়ার বিকল্প নেই। বইয়ের আকর্ষণ কমে যাওয়ার পেছনে কেউ কেউ সংবাদপত্রসহ রেডিও-টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেটের প্রসারকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, উন্নত বিশ্বে এসবের পাশাপাশি বইয়ের কাটতিও বেড়েছে। আসলে আমাদের বই-ব্যবস্থাকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পাঠাগারগুলোর দুর্দশা তারই প্রতিফলন। পাঠাগারগুলো যদি ইন্টারনেটসহ আধুনিক সুবিধায় সজ্জিত হতো, তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে সেগুলো স্বভাবতই আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পাঠাগারগুলো যেন পরিণত হয়েছে বইয়ের গুদামে। বড় পাঠাগারগুলোও অব্যবস্থাপনার নিদারুণ উদাহরণ। বইয়ের জোগান, বিন্যাস ও ব্যবস্থাপনা_ সবকিছুতেই অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট। আমরা বিশ্বাস করি, বিলম্বে হলেও পাঠাগারের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু তার আগে এগুলো নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। ডিসিসির পাঠাগারগুলো সংস্কার ও সুচারু পরিচালনার মধ্য দিয়েই সেই শুভকর্মের সূচনা হোক। পাঠাভ্যাস নির্বাসনে দিয়ে আর যাই হোক, জাতি হিসেবে আমরা উন্নতি লাভ করতে পারব না।
 

No comments

Powered by Blogger.