মোকাবিলায় চাই পরিকল্পিত প্রস্তুতি-বন্যা-পরিস্থিতির অবনতি

উত্তরবঙ্গে বন্যা-পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে কী দুর্ভোগ নেমে এসেছে, তার কিছু বিবরণ শনিবারের প্রথম আলোর প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। জামালপুর ও সিলেট জেলায়ও অনেক এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে।


প্রায় সব অঞ্চলেই নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে; বেশির ভাগ এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষের জীবনযাপনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ; খাদ্য, নিরাপদ পানীয়জলের অভাবের সঙ্গে যোগ হয়েছে পানিবাহিত রোগব্যাধির ঝুঁকি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ দুর্যোগময় পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
বন্যা-পরিস্থিতির অবনতির কারণ শুধু মৌসুমি বৃষ্টিপাত নয়; উজান তথা ভারতের আসাম অঞ্চল থেকে নেমে আসা ঢল। সব নদ-নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি, এমনকি অঞ্চলবিশেষে বিপদৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার অর্থ দেশের মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে বন্যা ক্রমশ দক্ষিণ দিকে বাড়ার আশঙ্কা। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই এমন পরিস্থিতি যথেষ্ট দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে। কারণ, বন্যা-পরিস্থিতির আরও অবনতি এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার লক্ষণগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা যদি হয়, তাহলে ফসলহানি, যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে, তা মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠবে।
বন্যাপ্রবণ এই দেশে বর্ষাকালে স্বাভাবিক প্লাবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এ দেশের মানুষের রয়েছে। সে কারণে কোনো বন্যাতেই তারা পুরোপুরি পর্যুদস্ত হয় না; বন্যার পানি নেমে গেলে সমুদয় ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে নতুন করে উঠে দাঁড়াতেও তাদের বেশি সময় লাগে না। তবে প্রকৃতির সঙ্গে এই নিরন্তর যুদ্ধে রাষ্ট্র ও সমাজ তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে সংকটের দিনগুলোতে তাদের দুর্ভোগ কমতে পারে। সে জন্য দুর্যোগ মোকাবিলা, ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবাসংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর যে সক্রিয় তৎপরতা প্রয়োজন, তা এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে খাদ্য ও নিরাপদ পানীয়জলের সংকটের মুখে পড়েছে। এ সংকট সামনের দিনগুলোতে আরও বেড়ে যাবে। এর মধ্যে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে দ্রুতই তা মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। সে জন্য শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানীয়জল, খাবার স্যালাইনসহ জরুরি ওষুধপত্রের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র-যুবকদের সংগঠন, ব্যবসায়ী সমাজসহ সবার এখন বন্যাদুর্গত ব্যক্তিদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার সময়; আরও অবনতি ঘটার আগেই।

No comments

Powered by Blogger.