টুকিটাকি-ঘনত্বের কম-বেশি

একই তাপমাত্রা ও চাপে কঠিন বা তরল অবস্থার তুলনায় গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের অণুগুলো প্রায় ১০ গুণ বেশি দূরে অবস্থান করে। ফলে কঠিন বা তরল অবস্থার তুলনায় গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের ঘনত্ব অনেক কম। গ্যাসের এ ব্যাপারটি হরহামেশাই ব্যবহার করছি।


যেমন ভুট্টা থেকে যে পপকর্ন বানানো হয় তার মূল কারণ গ্যাস বা বাষ্প। তরল পানি ও জলীয়বাষ্পের ঘনত্বের পার্থক্যের (যথাক্রমে ১ গ্রাম/লিটার ও ০.০০১ গ্রাম/লিটার) জন্যই পপকর্ন ফুলে ওঠে। ভুট্টা শস্যকে তাপ দিলে এর ভেতরে জমে থাকা পানি বাষ্পে পরিণত হয়। এই জলীয় বাষ্পের আয়তন প্রায়এক হাজার গুণ বেশি, যার কারণে ভুট্টা ফুলে উঠে পপকর্ন হয়ে যায়।
গাড়িতে নিরাপত্তার জন্য যে এয়ারব্যাগ বা বায়ুথলে ব্যবহার করা হয়।
বায়ুথলে সেকেন্ডেরও কম সময়ে ফুলে ওঠে বা চুপসে যায়।
পুরো ব্যাপারটি ঘটানো হয় সোডিয়াম অ্যাজাইডের বিক্রিয়ার মাধ্যমে। অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার সংকেত পেলেই বায়ুথলেতে থাকা সোডিয়াম অ্যাজাইড বিক্রিয়ার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে নাইট্রোজেন গ্যাস তৈরি করে।
ফলে বায়ুথলেটি ফুলে ওঠে এবং গাড়ির ভেতর থাকা যাত্রী ও চালক মারাত্মক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। ডিনামাইট বা বিস্ফোরকের ক্ষেত্রেও এই কঠিন বা তরলের সঙ্গে গ্যাসের ঘনত্বের পার্থক্যটিই ব্যবহার করা হয়। শিলাস্তর বিশ্লেষণ, সুড়ঙ্গ নির্মাণ, ধাতব আকরিক সংগ্রহের কাজে ডিনামাইট ব্যবহার করে প্রতিবছর প্রচুর শ্রম বাঁচানো হয়। ডিনামাইটের সবচেয়ে কার্যকর উপাদান হলো নাইট্রোগ্লিসারিন। উচ্চ তাপমাত্রায় এটি মুহূর্তের মধ্যে তরল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়।
বিস্ফোরণের উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাসের আয়তন প্রায় ২০ হাজার গুণ বৃদ্ধি পায়, ফলে ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটে, আর তাই এ ধরনের বিস্ফোরকগুলো পদার্থকে টুকরো টুকরো করে ফেলতে পারে।
তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘনত্বের পরিবর্তনই উষ্ণ বায়ু বেলুনের কার্যনীতির মূল ভিত্তি। শীতল বায়ুর চেয়ে উষ্ণ বায়ুর ঘনত্ব কম বলেই উষ্ণ বায়ু পেলে বেলুন ওপরে ওঠে। অন্যদিকে ফানুস ও ব্লিম্প হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে পূর্ণ করা হয়, যা বায়ুর চেয়ে হালকা।
তাই এরা আকাশে ওড়ে। ঘনত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হলো ব্যারোমিটার ও আবহাওয়া পূর্বাভাস। জলীয় বাষ্প বায়ুর চেয়ে হালকা। তাই আর্দ্র বায়ু শুষ্ক বায়ুর চেয়ে হালকা।
এ কারণে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে গেলে ব্যারোমিটারে চাপ কমে যায়, যা দেখে ঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়।
সুদীপ্ত দেব নাথ

No comments

Powered by Blogger.