চট্টগ্রামে খালেদা জিয়া-সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু অনিশ্চিত

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে না দাবি করে তিনি বলেন, 'আমাদের সময় আমরাও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে যমুনা সেতু নির্মাণ করেছি।


আমাদের সময়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি।'
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট স্বাধীনতা কমপ্লেঙ্ েজলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এ কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক ও কানাডার তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও ব্যক্তিদের নাম সরকারের কাছে জমা দেওয়ার পরও সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, 'সরকার নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু নির্মাণের ওয়াদা করেছিল। কিন্তু সরকার জনগণকে দেওয়া ওয়াদা রাখতে পারেনি। আর পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও জড়িত।'
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে অনেক সেতু ও রাস্তাঘাট হয়েছে জানিয়ে বিরোধী দল নেতা বলেন, এই সরকার তাও করতে পারেনি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একটি নয়, দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। এর একটি হবে মাওয়া দিয়ে এবং অন্যটি হবে দৌলতদিয়া দিয়ে।
খালেদা জিয়া বলেন, 'যে সরকার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকারের আমলে আর বিদেশি বিনিয়োগ হবে না।' তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না বলেও পুনরায় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করে তারা (আওয়ামী লীগ) তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেছে। সে জন্য আমরাও বলছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে। এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন মানব না। নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হয়, তাহলে তাদের ভরাডুবি হবে। তাই তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায়।'
সংবিধান সংশোধন বিষয়ে বিএনপিপ্রধান বলেন, তাঁর দল সংবিধান সংশোধন করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়েছিল এবং সারা পৃথিবীতে তা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে বর্তমান সরকারকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
চট্টগ্রামবাসীকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, 'যদি চট্টগ্রামের উন্নয়য় চান, তাহলে যেমনিভাবে আপনারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন তেমনিভাবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির সব প্রার্থীকে জয়ী করে উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতাসহ বিবিধ উন্নয়নকাজ ও সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানীতে রূপান্তর আমরা করব।'
আন্দোলন প্রসঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকার যত নির্যাতন করুক বা ভয় দেখাক না কেন, জনগণকে টলাতে পারবে না। ঈদের পর আন্দোলন জোরদার করা হবে। সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে এবং বিদায় নিতে হবে।

ত্রাণের যাত্রায় ঢোল-বাদ্য
আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে সোনারগাঁয়ের মেঘনা ঘাট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে হাজারো নেতা-কর্মী ও সমর্থকের ঢল নেমেছিল। তাঁরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে অবস্থান করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর এ সড়ক অতিক্রম করার সময়ে নেতা-কর্মীরা ঢোল-বাদ্য বাজিয়ে, উল্লাস করে তাঁদের নেত্রীকে স্বাগত জানান।
সড়কের বিভিন্ন স্থানে জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইন সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার, সহসভাপতি বদরুজ্জামান খান খসরু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, জেলা যুবদল নেতা মোশাররফ হোসেন, বিএনপি নেতা এ টি এম কামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমবেত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের হাতে ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থানীয় নেতাদের ছবি।
বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া দলীয় কোনো সমাবেশ কিংবা সভা করতে চট্টগ্রামে যাননি। তাঁর চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল পাহাড় ও ভূমিধসে নিহত শতাধিক পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করা। সেই বেদনাদায়ক ঘটনায় মর্মাহত খালেদা জিয়ার যাত্রাকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে উল্লাসের মাধ্যমে স্বাগত জানানো ঠিক হয়নি।
জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, তৃণমূল কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের নেত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন। এটা দোষের কিছু নয়।

No comments

Powered by Blogger.