দারিদ্র্য বিমোচন ও ইসলাম by মোহাম্মদ সদরুল আমীন রাশেদ

শুধু পরকালীন শান্তি নয়, ইহকালীন জীবনেও সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের কথা বলে ইসলাম। ইসলাম যেমন নামাজ-রোজার কথা বলে, তেমনি অর্থনীতির কথাও বলে। সুদের ভয়াবহ পাপ ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করার জন্য ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।


দারিদ্র্য বিমোচন, সম্পদের মালিকানা ও শ্রমিকের অধিকার সংক্রান্ত ইসলামের কল্যাণকর নীতিমালা হজরত রাসূল (সা.) নিজে বাস্তবায়ন করে গেছেন। পরবর্তীকালে খোলাফায়ে রাশেদা কৃষি, শিল্প, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয় ইত্যাদি সংক্রান্ত ইসলামের অর্থনৈতিক নীতিমালাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করেছেন। ইসলামী অর্থনীতি সম্পদে ব্যক্তিমালিকানার পাশাপাশি ব্যক্তির সম্পদের ওপর সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
ইসলামী অর্থনীতি মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রকে যেভাবে তাগিদ দিয়েছে, তার নজির দুনিয়ার আর কোনো অর্থনীতিতে নেই। ইসলামী অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, অর্থ ব্যবস্থা তথা সমাজ ব্যবস্থায় আদল ও ইহসান প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, 'আল্লাহতায়ালা তোমাদের আদল, ইহসান করতে ও নিকটাত্মীয়দের অধিকার আদায়ের আদেশ দিচ্ছেন এবং অশ্লীলতা, দুর্নীতি ও সীমা লঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন।' (সূরা আন নহল-৯০)। কোরআন মজিদে ৮০ বার জাকাতের কথা বলা হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমাদের একসঙ্গে আদেশ করা হয়েছে নামাজ কায়েম করা ও জাকাত দেওয়ার জন্য।'
আমাদের দেশে যারা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে, তারা মূলত দক্ষ; কিন্তু তাদের অভাব হচ্ছে পুঁজি বা সম্পদের। বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আর্থিক সম্পদের অন্যতম বিকল্প হিসেবে মানবসম্পদ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশে এ সম্পদ সাধারণত এ কারণেই উপেক্ষিত হয়ে থাকে যে এদের অধিকাংশই দরিদ্র, অশিক্ষিত, সম্পদহীন, সর্বোপরি সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও পশ্চাৎপদ।
ইসলামে জাকাত দেওয়ার কথা বলার পাশাপাশি ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের প্রতি সমভাবে অপব্যয় না করার জন্য বাধ্য করা হয়েছে। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠা।
আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে তার জীবন-জীবিকা পরিচালনার অসংখ্য উপায় সঙ্গে দিয়েছেন। দরিদ্রতা যে কঠিন অভিশাপ, এ কথা সর্বজনবিদিত। কোনো মানুষই চায় না দরিদ্র হয়ে বাঁচতে। অপরিসীম দরিদ্রতায় নিমজ্জিত একজন মানুষ সে যত নিম্নপেশারই হোক, সে চায় তার বর্তমান অসচ্ছলতা দূর হোক, দরিদ্রতার অবসান ঘটুক, কষ্ট-যন্ত্রণা দূর হোক, সর্বোপরি সামান্য হলেও জীবনমান উন্নত হোক। এ জন্য আমরা লক্ষ্য করি, ইসলাম দরিদ্রতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ইসলামে দরিদ্রতা একটি কঠিন মুসিবত হিসেবে স্বীকৃত। ভিক্ষাবৃত্তি এ জন্য ইসলামে একটি অপছন্দনীয় পেশা। রাসূলে করিম (সা.) প্রার্থনা করতেন, 'হে আল্লাহ, আমি দারিদ্র্য, অভাব ও লাঞ্ছনা থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই।' (বুখারি) দারিদ্র্য তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খুব সুস্পষ্টভাবেই ধরা পড়ে, ইসলাম দারিদ্র্যকে ঘৃণা করে, কিন্তু দরিদ্রকে ভালোবাসে। আসলেই ইসলাম কখনোই অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিরোধী ছিল না।
 

No comments

Powered by Blogger.