আধুনিক ইসলামী বিশ্বকোষ by ফরহাদ জাকারিয়া

অ্যান এডুকেশনাল এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম। ইসলামী বিষয়াবলির ওপর লেখা সস্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বকোষ। সম্পাদক সৈয়দ ইকবাল জাহির। প্রকাশক ব্যাঙ্গালোরের ইস্ট ওয়েস্ট এডুকেশনাল টুলস। এ বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ব্যাঙ্গালোরে মোড়ক উন্মোচনের পর গত সপ্তাহে এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে সৌদি আরবে।


প্রকাশের খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বকোষটি শিক্ষার্থী, ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষকদের কাছ থেকে পেয়েছে ব্যাপক প্রশংসা।
বিশ্বকোষটির বিশেষত্ব হলো সুন্নাহ, ইসলামী আইন শাস্ত্র, পরিবার কাঠামো, দৈনন্দিন জীবনযাপন সংশিল্গষ্ট বিষয়গুলোর পাশাপাশি সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক জীবনযাপন এবং এ সংক্রান্ত বিষয়াদি। মানবাধিকার এবং আধুনিক যুুগে আন্তঃধর্মীয় যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ এন্ট্রিও সংযোজন করা হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা হলেও এর ভাষা অত্যন্ত সহজ এবং সাবলীল।
জিহাদ এবং নারীর সামাজিক মর্যাদা বর্তমান সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এসব ইস্যুতে আলেম সমাজও এখন দ্বিধাবিভক্ত। বিশ্বকোষটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জিহাদ এবং নারীর সামাজিক মর্যাদার এন্ট্রি দুটিতে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটানো। ৫০টি ফুল স্কেল রঙিন ম্যাপের পাশাপাশি এন্ট্রিগুলোতে সংশিল্গষ্ট ছবি সংযোজন করা হয়েছে। ছবিগুলো আকর্ষণীয় এবং মনোমুগ্ধকর। ম্যাপ এবং ছবিগুলো খুব সহজেই নিবন্ধ সম্পর্কে পাঠকের বোধগম্যতা তৈরিতে সহায়তা করবে।
বিশ্বকোষটিতে রাসূলের (সা.) পাশাপাশি রয়েছে হাদিসবেত্তা ইমাম বুখারী (রহ.), মুসলিম (রহ.), আবু দাউদ (রহ.) এবং তিরমিযীর (রহ.) জীবনী সংশিল্গষ্ট নিবন্ধ। চার মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম শাফেয়ী (রহ.), ইমাম মালিক (রহ.) এবং আহমদ ইবনে হাম্বলের (রহ.) জীবনীও আলোচিত হয়েছে গুরুত্বসহকারে।
ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে বিশ্বব্যবস্থায়। এই দুই শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা। তাই এই দুই শতাব্দীতে আরবের মূল ভূখণ্ড, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপে ইসলামী সংস্কৃতির বিবর্তনের ফলে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে উদ্ভূত নতুন নতুন সমস্যা এবং তা সমাধানের দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ইসলামের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে আধুনিকতাকে।
বর্ণানুক্রম অনুসারে সাজানো বিশ্বকোষটিতে সংযোজন করা হয়েছে ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্মীয় বিষয়াদি সংশিল্গষ্ট নিবন্ধ। সংক্ষিপ্ত নিবন্ধের পাশাপাশি রয়েছে বিস্তারিত নিবন্ধও। প্রত্যেকটি নিবন্ধে ইসলামের মহত্ত্ব এবং চিরন্তন ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
দুই খণ্ডে সমাপ্ত বিশ্বকোষটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৩শ'। সম্পাদক সৈয়দ ইকবাল জাহির বলেছেন, এটি তার বিশ বছরের প্রচেষ্টার ফসল। তবে ভবিষ্যতে এর ভলিউম সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এখন পর্যন্ত যেসব ইসলামী বিশ্বকোষ লেখা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই রচিত হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বে। আর তাই সেই বিশ্বকোষগুলোয় জিহাদ, ফতোয়া, নারীর সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করা হয়েছে নেতিবাচকভাবে। অনেক ক্ষেত্রেই ইসলামের সঠিক চিত্র তুলে ধরা হয়নি। সেদিক বিবেচনায় বর্তমান বিশ্বকোষটির মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান হবে। ইসলামের ভুল চিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যে তৈরি হয়েছে দূরত্ব। এই বিশ্বকোষটি হতে পারে ইসলাম ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধ। মুসলিম উম্মাহর হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারেও হতে পারে সহায়ক।
fzakariabd@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.