অন্ধকারে আলোর আশা

বিদ্যুৎ ঘাটতি সঙ্গে নিয়েই শুরু হয়েছে সেচ মৌসুম। রাতে সর্বাধিক বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও সেচ মেশিনগুলোর রাত কাটে বিদ্যুতের স্বপ্ন দেখে। অথচ এই শীতে গৃহস্থালি কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার খুবই কম থাকার কথা। শহরাঞ্চলের শীতাতপ যন্ত্রগুলো এখনো চলতে শুরু করেনি এবং মধ্যবিত্তের ঘরের ফ্যানগুলোও প্রায় অনড় রয়েছে গৃহস্থের ঠাণ্ডা হাওয়া এখনো তেমন প্রয়োজন হয়নি বলে।


তাহলে এখনই কেন সেচযন্ত্রের জন্য বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না? আসলে বিদ্যুতের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়েনি, সেটাই তো সর্বোতভাবে সত্য। উৎপাদনক্ষমতা কম এটা যেমন একটি যুক্তি, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উৎপাদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বসে থাকার বিষয়টিও। এই মুহূর্তে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের ১১টি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসের কারণ যেমন আছে, তেমনি আছে কেন্দ্র সংস্কারের কারণটিও। প্রশ্নটা এখানেই। সরকার সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ রেশনিং করছে; এটা আগেই বলে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতিজনিত কারণে মানুষের দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যাবে, এটা সাধারণ মানুষ মেনে নিয়েছে। তাদের মধ্যে সহনশীলতা স্পষ্ট। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই সহনশীলতা নিশ্চয়ই আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়। সংগত কারণেই পরিকল্পনার ত্রুটিজনিত কারণে মানুষের দুর্ভোগ হলে সেটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না সাধারণ মানুষ।
বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করতে এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে সরকার টেন্ডার ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা-ও সাধারণ মানুষ অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তার পরও কুইক রেন্টাল ইউনিটগুলো কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারছে না? সেখানেও কি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যুক্ত হয়েছে? কিছু প্রতিষ্ঠান সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেনি বলে শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিলম্বের কারণ কি শুধু ওইসব প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতার অভাব, নাকি অবহেলার কারণে? অভিজ্ঞতা কিংবা দক্ষতার অভাবে উৎপাদনে যেতে না পারলে এর দায় শুধু তাদেরই নয়, সরকারকেও বহন করতে হবে। এদিকে সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি কুইক রেন্টাল কম্পানিকে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়ার পরও পিডিবি এখন তাদের প্রাথমিক অনুমোদনও বাতিল করতে উদ্যোগী হয়েছে। এ সংবাদটিও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইতিবাচক নয়। প্রায় দুই বছর পর কোনো কারণে তাদের অনুমোদন বাতিল করতে হচ্ছে, এমন তথ্যও প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকার সংবাদে। তেমনি দুটি কম্পানিকে সরকার এরই মধ্যে জরিমানাও করেছে। দুই বছর সরকারের বয়স, সুতরাং এখন মানুষ সুস্পষ্টভাবেই জানতে চায় বিদ্যুৎ সমস্যার কতটুকু সমাধান হয়েছে। তাই বন্ধ থাকা ইউনিটগুলো দ্রুত উৎপাদনে আসুক এবং ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোসহ নির্মাণাধীন সব কেন্দ্র দ্রুত চালু হোক, এমন প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.