বিকল্প সিনেমা ঘর by একরামুল হক শামীম

মহীনের ঘোড়াগুলো অ্যালবামের একটি গান আছে এমন_ 'পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে স্যাটেলাইট আর কেবলের হাতে ড্রয়িং রুমে রাখা বোকাবাক্সতে বন্দি/ঘরে বসে সারা দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ আজ হাতের মুঠোতে ঘুচে গেছে দেশকাল সীমানার গণ্ডি।' নামকরণ বোকাবাক্স হলেও এর প্রভাব অনেক।


দেশকাল সীমানার গণ্ডি ঘুচিয়ে দিতে এই বোকাবাক্সের অবদান অনেক। তবে প্রতিযোগিতায় বোধহয় বোকাবাক্সকে পেছনে ফেলতে যাচ্ছে কিংবা এরই মধ্যে পেছনে ফেলে দিয়েছে বোকাবাক্সের মতোই দেখতে ইন্টারনেট লাইনযুক্ত কম্পিউটার। বলা হয়ে থাকে একটি কম্পিউটারের সঙ্গে ইন্টারনেটের লাইন নাগালে আছে মানেই সারা দুনিয়া সঙ্গে আছে, সামনে আছে।
একটা সময় ছিল সিনেমা দেখতে হলে যেতে হতো সিনেমা হলে। তারপর ভিসিআর পেরিয়ে ভিসিডির আর ডিভিডির যুগ। ট্রিপল ডবি্লউর (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব) যুগে নানা টরেন্ট সাইটের কল্যাণে এখন সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো বিশ্বের যে কোনো দেশে বসেই দেখা সম্ভব। হয়তো হলিউডের কোনো একটি সিনেমা মুক্তি পেল, তার কয়েকদিনের মধ্যেই টরেন্ট সাইট থেকে ডাউনলোড করে দেখে নেওয়া সম্ভব। পদ্ধতির উন্নতি হতে থাকে। এখন অনলাইনেই পছন্দের সিনেমাগুলো দেখে নেওয়া সম্ভব।
অনলাইনে সিনেমা দেখার কথা বললে শুরুতেই আসবে ইউটিউবের কথা। ইউটিউবে শুরুতে নির্দিষ্ট সময়ের ভিডিও দেখা সম্ভব হতো। কিন্তু পরে সেই নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডি বাড়তেই থাকে। এখন পুরো একটি সিনেমা দেখা সম্ভব ইউটিউবে। এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগানো শুরু করেছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে ইউটিউব ভাড়ার ভিত্তিতে সিনেমা দেখার সুযোগ করে দেয়। স্বল্প সময়ের মধ্যে ইউটিউবের কৌশল বেশ কাজে লাগে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ মে আরও ৩ হাজার সিনেমা যুক্ত করা হয়। ৩ থেকে ৪ ডলারে এই সিনেমাগুলো ইউটিউবে দেখা যাবে। একটি সিনেমা ভাড়া নেওয়া যাবে ৩০ দিনের জন্য। অর্থাৎ ইউটিউবে ভাড়া নেওয়া সিনেমাটি ৩০ দিনের মধ্যে দেখে শেষ করতে হবে। ইউটিউবের সিনেমা সার্ভিসের জনপ্রিয়তার কারণে অনেক সিনেমা রিলিজ পায় ইউটিউবে। 'হোম' নামের একটি সিনেমা ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছিল। এছাড়া বলিউডের সিনেমা স্ট্রাইকার রিলিজ দেওয়া হয়েছিল ইউটিউবে।
সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপও অনলাইনে মুভি দেখার সার্ভিস শুরু করেছে। এছাড়া অনলাইনে টিভি দেখার সার্ভিসও রয়েছে। ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করে নিলে প্রথম সাত দিন বিনামূল্যে স্টার আনন্দ চ্যানেল দেখার সুযোগ মিলবে। সাত দিন পরেও স্টার আনন্দ দেখা যাবে। তবে তার জন্য সিলভার, গোল্ড অথবা প্ল্যাটিনাম যে কোনো একটি প্যাকেজ কিনতে হবে। সিলভার প্যাকেজ কিনলে সব ফ্রি সিনেমা দেখাসহ ১০টি সিনেমা সাবক্রাইব করা যাবে। গোল্ড প্যাকেজের ক্ষেত্রে সিনেমার সংখ্যা ১৫ এবং প্ল্যাটিনাম প্যাকেজের ক্ষেত্রে তা ২০। নতুন মুক্তি পাওয়া সিনেমার পাশাপাশি পুরনো জনপ্রিয় সিনেমাগুলোও আনন্দবাজার রেখেছে তাদের সিনেমাঘরের তালিকায়।
তাহলে কি অনলাইন বিকল্প সিনেমাঘর হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে অবশ্য এখনও অনলাইনে সিনেমা দেখার অভ্যাস ওইভাবে গড়ে ওঠেনি। এর কারণ নিম্নগতির ইন্টারনেট লাইন। তবে আশা করা যায় ইন্টারনেটের স্পিড বাড়লে অনলাইনে সিনেমা দেখার অভ্যাস বাড়বে। আনন্দবাজারের মতো বাংলাদেশেও তৈরি হতে পারে এমন অনলাইন সিনেমাঘর।

No comments

Powered by Blogger.