শেয়ারবাজার-আস্থা ফেরাতে দ্রুত কিছু করুন

শেয়ারবাজারের বিপর্যয় দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে, এটা আশা করা অনুচিত। ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন পুনর্গঠনসহ যেসব সুপারিশ করেছে এমনকি তার পূর্ণ বাস্তবায়ন হলেও বাজারের ওপর ক্ষুদ্র ও বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সময় লাগবে।


তবে এজন্য কি দীর্ঘমেয়াদে অপেক্ষা করে থাকতে হবে এবং সে বিবেচনা থেকে সরকারের ধীরেসুস্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিলেও চলবে? এমন পরামর্শ কেউ প্রদান করে থাকলে সেটা সর্বনাশা ছাড়া কিছুই নয়। বৃহস্পতিবার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল এভাবে_ 'ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা গভীর হতাশায়' এবং 'পুঁজিবাজার স্থবির, ক্রেতা নেই'। এ থেকে বাজারচিত্র স্পষ্ট। এদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ঊর্ধ্বমুখী ছিল, যা পূর্ববর্তী কয়েকদিনের তুলনায় ব্যতিক্রম। তবে তাতেও ব্রোকার হাউস এবং তাদের শাখাগুলোতে বিনিয়োগকারীদের ভিড় ফের উপচে পড়বে, এমন ভাবার কারণ নেই। কিন্তু অর্থনীতির স্বার্থেই এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে। শিল্প-বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন জোগান দিতে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী বিভিন্ন সময়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনেছে। এ ক্ষেত্রে লাভের প্রত্যাশা অবশ্যই ছিল এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য এর প্রয়োজন সর্বত্র স্বীকৃত। একটি অংশের মধ্যে রাতারাতি ভাগ্য ফেরানোর উদগ্র বাসনাও কাজ করে থাকবে। কিন্তু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় মূলধনের উৎস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশের সর্বত্র, এটাই অভিজ্ঞতা। এ সুবিধা অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। যারা এজন্য এগিয়ে আসবে, তাদের দিতে হবে প্রয়োজনীয় প্রটেকশন। ঝুঁকিপূর্ণ বাজারে বুঝেশুনে আসতে হবে_ কেবল এ আপ্তবাক্য আওড়ানোর যুক্তি কিন্তু নেই। পুঁজিবাজারের কিছু অসৎ খেলোয়াড়ের কারণে তাদের অনেকে একাধিকবার প্রতারিত হয়েছে, কেউ কেউ সর্বস্বান্ত হয়েছে। কিন্তু বাজারের ওপর ভরসা চলে গেছে, সেটা বলা চলে না। সরকার কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্রোকার হাউসগুলোতে বিনিয়োগকারীদের জমায়েত বেড়ে যায়। পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত তাদের উৎসাহী করে তোলে। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও আইসিবির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব তলবের পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানান। কিন্তু বাজারে আস্থা ধারাবাহিক করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনেক কিছু করার রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এর মধ্যে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি স্বাধীন ও দক্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা। এ প্রতিষ্ঠানকে চলতে হবে অর্থনীতির নিয়মে। তারা মার্কেট প্লেয়ারদের যেমন হাতের পুতুল হবে না, তেমনি সরকার দ্বারাও পরিচালিত হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাজ ও পদক্ষেপের মধ্যে সমন্বয়সাধনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। মোটকথা, অতিধীরে চলার কৌশলের অবসান ঘটানো জরুরি। অন্যথায় অর্থনীতির আরও ক্ষতি হবে, একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক মূল্য দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। বাজারে লাখ লাখ মানুষ ছোট ও বড় নানা অঙ্কের পুঁজি নিয়ে ছুটে এসেছিল। তা হারানোর যন্ত্রণা অবশ্যই সরকারকে বুঝতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.