পাহাড়ি ঢল, বন্যা-আড়াই কোটি টাকা, সাত হাজার টন চাল বরাদ্দ

কয়েক দিনের অতিবর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্য এবং ২৪ জেলার বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকার এ পর্যন্ত দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা ও সাত হাজার ৫০ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন জেলায় এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ও পাঁচ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।


খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ জেলা_চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ছাড়াও বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বরাদ্দপ্রাপ্ত জেলাগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জে দুই লাখ টাকা ও ১০০ টন চাল, লালমনিরহাটে ৫০ টন চাল, রাঙামাটিতে পাঁচ লাখ টাকা ১০০ টন চাল, গোপালগঞ্জে ৫০ টন চাল, রংপুরে ৫০ টন চাল, গাইবান্ধায় ১৩ লাখ টাকা ও ৩০০ টন চাল, কুড়িগ্রামে ১৫ লাখ টাকা ও ৬৫০ টন চাল, সিরাজগঞ্জ ১০ লাখ টাকা ও ৩০০ টন চাল, পাবনায় পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০ টন চাল, রাজবাড়ীতে পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০ টন চাল, মাদারীপুরে ১০ লাখ টাকা ও ৩০০ টন চাল, বগুড়ায় তিন লাখ টাকা ও ২০০ টন চাল, চাঁদপুরে পাঁচ লাখ টাকা ও ২০০ টন চাল, ময়মনসিংহে পাঁচ লাখ টাকা ২০০ টন চাল, জামালপুরে ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চাল, টাঙ্গাইলে ১০ লাখ টাকা ৪০০ টন চাল, মুন্সীগঞ্জে পাঁচ লাখ টাকা ৩০০ টন চাল, শরীয়তপুরে পাঁচ লাখ টাকা ও ৩০০ টন চাল, সিলেটে ১০ লাখ টাকা ৩০০ টন চাল, মানিকগঞ্জে ১০ লাখ টাকা ও ৩০০ টন চাল এবং সুনামগঞ্জে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
১১৮ লাশ উদ্ধার : মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল, পাহাড়ধস, পানিতে ডুবে এবং বজ্রপাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে আজ পর্যন্ত ১১৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩২ জন, কক্সবাজারে ৪৭ জন, বান্দরবানে ৩৭ জন এবং সিলেটে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের লাশ দাফন ও সৎকারের জন্য প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
বান্দরবানের ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার ৫০০ জন এবং কক্সবাজার জেলার ১৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৮ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি নেমে যাওয়ায় তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে স্থানীয় প্রশাসনেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে গৃহনির্মাণ বাবদ প্রায় ১১ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে এ খাতে আরো বরাদ্দ দেওয়া হবে।
গতকালের দেওয়া বরাদ্দের আগে সরকার এক কোটি ২০ লাখ টাকা ও এক হাজার ৭৫০ টন চাল বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৪০ লাখ টাকা ও ৬০০ টন চাল, কক্সবাজারে ৩০ লাখ টাকা ও ৫০০ টন চাল, বান্দরবানে ১০ লাখ টাকা, সিলেটে ১০ লাখ টাকা ও ২৫০ মে.টন চাল, ফেনীতে পাঁচ লাখ টাকা ও ৫০ মে.টন চাল, নেত্রকোনায় দুই লাখ টাকা, ভোলায় দুই লাখ টাকা, পিরোজপুরে দুই লাখ টাকা ও ৫০ টন চাল, হবিগঞ্জে পাঁচ লাখ টাকা, মৌলভীবাজারে পাঁচ লাখ টাকা ২০০ টন চাল ও গৃহনির্মাণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা এবং মানিকগঞ্জে চার লাখ টাকা ও ১০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলাগুলোর ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অসিত কুমার মুকুট মণি চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের তিনজন পরিচালক ও দুজন উপপরিচালক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার ত্রাণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করা ও সার্বিক সমন্বয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলায় অবস্থান করছেন।
গতকাল জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) সার্বক্ষণিকভাবে খোলা ছিল।

No comments

Powered by Blogger.