যানজটে স্থবির হয়ে যায় ঢাকা by আর কে চৌধুরী

রাজধানী ঢাকা ক্রমেই মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ঢাকাকে এখন বলা হচ্ছে যানজটের নগরী। প্রায় দেড় কোটি মানুষের এ মহানগরীতে মানুষের ঘোরাফেরা বা নির্বিঘ্নে শ্বাস নেওয়ার মতো মুক্ত পরিবেশের অভাবও প্রকট।
যানজটে রাজধানী ঢাকা ক্রমেই অচল নগরীতে পরিণত হচ্ছে।


রাজধানীতে জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা এমনিতেই কম। তার পরও রয়েছে স্বল্পগতির রিকশা ও প্রাইভেট কারের আধিক্য। ফুটপাত দখল করে দোকানপাট চালানো কিংবা রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং_এ মেগাসিটিতে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী রাখা এ নগরীতে অপরাধ বলে বিবেচিত হয় না। ট্রাফিক নিয়ম না মানাই রাজধানীর যানবাহন চালকদের কাছে নিয়ম বলে পরিচিত। বলাবাহুল্য, এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই সাধারণ মানুষও। ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে এ নগরীতে যেখানে-সেখানে রাস্তা পার হওয়ার কসরত চলে। ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও নিচ দিয়ে রাস্তা পারাপার অনিয়মের বদলে নিয়ম হিসেবেই বিবেচিত হয়। পানি, পয়োনিষ্কাশন, টেলিফোন ও গ্যাসলাইনের জন্য যখন-তখন রাস্তা খোঁড়া দেড় কোটি মানুষের এ মহানগরীতে প্রতিদিনের চিত্র বললে অত্যুক্তি হবে না। এর পাশাপাশি রয়েছে জনসভা ও মিছিলের মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। রাস্তায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করাকে কেউ কেউ রাজনৈতিক অধিকার বলে ভাবেন। মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলছে যানজট। একসময় ঢাকার পরিচিতি ছিল মসজিদের নগরী হিসেবে। এখন সে পরিচিতি ডিঙিয়ে যানজটের নগরী হিসেবে ঢাকার অভিষেক ঘটেছে। বলা হয়, আজকের যুগ হলো গতির যুগ। কিন্তু যানজট রাজধানীর মানুষকে ইতিমধ্যে গতিহীন করে ফেলেছে। বিদেশিদের কাছে ঢাকার যানজট একটি মূর্তমান সমস্যার নাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজপথে অথর্ব হয়ে বসে থাকার বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে এ নগরীকে পাশ কাটিয়ে চলতে চান। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহী হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবেও ঢাকার যানজটকে চিহ্নিত করা হয়। রাজধানীর যানজট সহনীয় মাত্রায় আনতে স্বল্পগতির যানবাহন ও প্রাইভেট কারের সংখ্যাধিক্যের দিকে নজর দেওয়া দরকার। ট্রাফিক আইন যাতে সব ক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে মানা হয় সে ব্যাপারেও যত্নবান হতে হবে। ফুটপাত থেকে দোকানপাট উঠিয়ে দেওয়া, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রাইভেট কার চলাচল কমিয়ে আনার কথাও ভাবতে হবে। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণসহ যানজট নিরসনে সরকারের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়নও জরুরি হয়ে উঠেছে। রাজধানী ঢাকা শুধু যানজট নয় নানা সমস্যার ভারে আক্রান্ত।
সে ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরীর যাবতীয় অব্যবস্থাপনার জন্য মহানগরীতে করপোরেশনের দায়ভার কতটুকু? ঢাকা নগরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে মেয়র ও কাউন্সিলররা যে কত অসহায় নিমতলীর ট্র্যাজেডিতেই তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জে দেখা যায়, পরিবারের কোনো সদস্য দায়িত্বশীল ও সংসার চালাতে সক্ষম কি না তা দেখার জন্য তাকে কিছু সম্পত্তি দিয়ে পৃথক করে দেওয়া হয়। একইভাবে স্বশাসিত স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চালু করে একই সঙ্গে গ্রামে ও নগরে স্থানীয় প্রতিনিধিদের সংসার আলাদা করে দিতে হবে। ঢাকাকে মানুষের বসবাসযোগ্য রাখতে হলে এ মহানগরী নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করে ঢাকার ওপর থেকে বাইরের জনস্রোতের চাপ কমানো দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, রাজধানী পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা, যোগাযোগ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস উন্নয়ন_সব খাতের সমন্বয় থাকা দরকার। অচল রাজধানীকে সচল করার এটাই প্রকৃষ্ট উপায়।

লেখক : রাজনীতিক

No comments

Powered by Blogger.