বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্যোগ বাড়ান-বিপর্যস্ত বিদ্যুর‌্যা খাত

তীব্র বিদ্যুর‌্যাসংকটের কারণে শিল্পোর‌্যাপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে—এটি এখন আর নতুন খবর নয়। বাড়তি দুঃসংবাদ হচ্ছে, বিদ্যুর‌্যা উর‌্যাপাদন যখন ব্যাপকভাবে বাড়ানো উচিত, তখন পরিকল্পিত প্রায় এক হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুর‌্যা উর‌্যাপাদন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।


কারণ, অর্থসংকট। আগামী এক বছরের মধ্যে ১১টি বেসরকারি বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা, যেখান থেকে মোট ৮০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুর‌্যা উর‌্যাপাদিত হবে। কিন্তু এগুলোর নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে; কারণ, এসব বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণ পাচ্ছেন না, বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আনার জন্য ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে জটিলতাটি বেশ গুরুতর। একক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নির্ধারিত ঋণসীমা বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্র নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত নয়; আবার এর চেয়ে বেশি অঙ্কের ঋণ ব্যাংকগুলো দিতেও পারছে না। এই অর্থ চলে যাবে বিদেশে, বৈদেশিক মুদ্রায়। ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট আছে, তার ওপর বাড়তি ঝুঁকি নিতে তারা সাহস পাচ্ছে না।
বড় তিনটি বেসরকারি বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্র নির্মাণও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অর্থায়ন-সংকটের কারণে। বিবিয়ানা-১ ও বিবিয়ানা-২ এবং মেঘনাঘাট-২ নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্ভবত শেষ হবে না; কারণ, বিশ্বব্যাংক এ ক্ষেত্রে প্রকল্প ঝুঁকি গ্যারান্টি (পিআরজি) না দেওয়ায় উদ্যোক্তা গ্রুপটি অর্থায়ন-সংকটে পড়ে গেছে। এই তিনটি বড় বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্র আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হওয়ার কথা ছিল, এগুলো থেকে পাওয়া যেত মোট এক হাজার ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুর‌্যা।
ছোট ১১টি ও বড় তিনটি মিলে মোট ১৪টি বেসরকারি বিদ্যুর‌্যাকেন্দ্র থেকে সর্বমোট এক হাজার ৮২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উর‌্যাপাদন এভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এবং তার বিপরীতে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলায় আগামী দিনগুলোতে দেশের বিদ্যুর‌্যা-পরিস্থিতির আরও দুর্দশা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বিদ্যুর‌্যা বিভাগ এক অদ্ভুত প্রস্তাব করেছে: সব শ্রেণীর গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হোক; এ থেকে বাড়তি যে অর্থের সংস্থান ঘটবে, তা ভর্তুকি হিসেবে বিদ্যুর‌্যা খাতের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হোক। মজার ব্যাপার হচ্ছে, জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ না করেই বিদ্যুর‌্যা বিভাগ এমন অদ্ভুত প্রস্তাবসহ প্রধানমন্ত্রীর জন্য এক কার্যপত্র তৈরি করেছে।
গ্যাসের দাম যদি বাড়াতেই হয়, তাহলে সেই বাড়তি অর্থ কাজে লাগানো উচিত গ্যাস খাতের উন্নয়নের জন্য। কারণ, গ্যাসসংকটও দিন দিন বাড়ছে। এই খাতের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করার আছে। এ জন্য গ্যাস উন্নয়ন তহবিল নামে একটি তহবিল আছে। এনার্জি রেগুলেটরির নির্দেশনাও গ্যাসের বর্ধিত মূল্য থেকে প্রাপ্ত বাড়তি অর্থ গ্যাস উন্নয়নের জন্য ব্যয় করার পক্ষে। গ্যাস খাতের উন্নয়ন ঘটলে, গ্যাস উর‌্যাপাদন বাড়ানো গেলে বিদ্যুর‌্যা খাতেরও লাভ হবে।
গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বিদ্যুর‌্যা খাতে অর্থায়ন-সংকট দূর করার ভাবনাটি সঠিক নয়। বিদ্যুর‌্যা খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগসহ অর্থায়নের অন্যান্য বিকল্প পথ অন্বেষণ করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.