চরাচর-রাতে ঢাকার রেস্তোরাঁ by জাহাঙ্গীর হোসেন

কত বছর ধরে ঢাকায় থাকছেন? দুই বছর, দশ বছর? ঢাকা শুধুই কি একটি শহর! রাতের ঢাকা কেমন? তা একবারও কি আপনার ঘুরে দেখা হয়েছে? কোনো একটা ছুটির দিনের আগের রাতটা কি এবার ঘুরে দেখবেন? নিয়ন আলোর ফাঁকা ঢাকা আর দিনের যানজটের ঢাকা একেবারেই ভিন্ন দুই নগরী।


সাহিত্যের ভাষায় বললে বলা যায়- দিনের ঢাকা হচ্ছে মিসির আলীর যুক্তিতর্কের ঢাকা আর রাতের ঢাকা হচ্ছে হিমুর রহস্যময় ঢাকা। চলুন, এই রহস্যময় ঢাকার রাতের রেস্তোরাঁ দেখার একটা সূচি করা যাক। এ ক্ষেত্রে নিজের বা বন্ধুর নিজস্ব বাহন থাকলে তো কথাই নেই। আর নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য বরং আছে আরো লোভনীয় বাহন, রিকশা। শুরুটা করতে পারেন সন্ধ্যা থেকে। স্থান নতুন ঢাকার শেষ প্রান্ত আশুলিয়া। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মা নদীর মাঝিতে পদ্মার বুকে রাতে কুপির আলোয় জেগে থাকে মাছ ধরার শত নৌকা। তেমনি আশুলিয়ার খোলা দুই প্রান্তরের মাঝখান দিয়ে আঁকা সুদীর্ঘ রাস্তার দুই পাশে সন্ধ্যার পর থেকেই দেখবেন প্রচুর হ্যাজাক লাইট। চটপটি, ফুচকার বিশাল সমারোহ। পরিবার, প্রেয়সী, বন্ধুবান্ধব- যেই পাশে থাকুক খোলা হাওয়ায় বিলের মাঝখানে রাস্তার পাশে বসে চটপটি, ফুচকার স্বাদ যে স্বর্গীয় লাগবে তা নিশ্চিত। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রাত ৮-৯টার মধ্যে চলে আসুন মোহাম্মদপুরে। মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প এলাকায় প্রচুর খাবার দোকান পাবেন। সবচেয়ে ভালো হয় লুচি আর গরু-খাসির চাপ। পয়সার চেয়ে সামান্য বড় সাইজের লুচি উল্কার বেগে তৈরি হচ্ছে আর টপাটপ ফেলা হচ্ছে গরম তেলের কড়াইয়ে। ছাঁকনি দিয়ে তুলে সরাসরি দিচ্ছে আপনার প্লেটে। চাপের মসলার মোগল সম্রাটীয় সুঘ্রাণ পেয়ে আবার বেশি খাবেন না। আরো অনেক খাবার বাকি। চাপের দোকানের সামনেই বিক্রি হচ্ছে শাহি পান। এখানে আপনাকে ধৈর্য ধরতেই হবে। একটা পান তৈরি করতে সময় লাগবে কম করে হলেও দুই মিনিট। আর স্পেশাল বানারসি পান হলে নিদেনপক্ষে পাঁচ মিনিট। এই পানেরও হাওয়াই মিঠাইয়ের স্বভাব। মুখে দেওয়া মাত্র মিশতে থাকবে মুখে আর আনন্দে ভিজতে থাকবে জিহ্বা। খুশি খুশি ভাব নিয়ে পানমুখে কিছুক্ষণ আড্ডা দিন। পাশেই পাবেন বিখ্যাত সেই মোস্তাকিমের কাবাব। মোস্তাকিমকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা মেরে ফেলার পর এই নামে পাশাপাশি অনেক কাবাবঘর হয়েছে। স্বাদে-গন্ধে মোগলীয়। এবার উদ্দেশ্য মূল জায়গায়- পুরান ঢাকা। মাঝে অবশ্য কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে আসতে পারেন সংসদ ভবনের সামনে। হরেক রকম খাবার নিয়ে হকাররা আপনার আশপাশে আর্জি ধরবে। হট প্যাটিস খেতে পারেন। জ্বলন্ত কয়লার ওপরে রাখা প্যাটিস। পেট ভরবে না; কিন্তু মুখে মজা লাগবে ঠিকই। রাত যখন প্রায় গভীর, রাস্তায় ব্যস্ততা যাবে কমে তখন রওনা হয়ে যান পুরান ঢাকার উদ্দেশে। চানখাঁরপুল এলাকায় যখন মাঝরাতে প্রবেশ করবেন তখন নিজেই অবাক হবেন! শক্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কবিতা শুনেছেন তো- দরজা এঁটে ঘুমিয়ে গেছে পাড়া, কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া/অবণী বাড়ী আছো? হ্যাঁ, ঢাকার সবাই যখন দরজা এঁটে ঘুমিয়ে গেছে, তখন পুরান ঢাকার সবাই জেগে উঠছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে আসবে অনেকে। মুমুনের বিরিয়ানি কিংবা আদি স্টারের কাবাব। অথবা নান্নার মোরগ পোলাও খেতে বসে যান। রাত এতক্ষণে হয়তো ভোরের দরজায়। এবার বাড়ি ফেরার পালা।
জাহাঙ্গীর হোসেন

No comments

Powered by Blogger.